ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
মিরপুর ১২ এর বেগুনটিলা লালমাঠ। সব বয়সী, নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, যুবদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ। সবাই এসেছিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করতে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিসহ ছেলেমেয়েরা সমবেত হয়েছেন এই মাঠে। ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের স্পিরিট প্রকল্পের সুবিধাভোগী কিশোর-কিশোরী-যুবদের অংশগ্রহণে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রীতি ম্যাচ’ এর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রীতিম্যাচে অংশ নিয়েছে বেগুনটিলা ও বাউনিয়াবাধের ছেলে ফুটবল দল এবং মেয়ে হ্যান্ডবল দল।
সকাল ১১টায় ছেলেদের ফুটবল খেলা দিয়ে শুরু হয় ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রীতি ম্যাচ’ । বেগুনটিলা ও বাউনিয়াবাধের ফুটবল খেলোয়ার ও দর্শকদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। কেউ ফাউল করেনি। নেই কোনো মারামারি। বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই দুই দল খেলা শেষ করেছে। বেগুনটিলা ছেলেদের ফুটবল দল ৪/১ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন দলে চারটি গোল করেছে ভিকি, ইব্রাহীম, মুন্না ও সামির। অন্যদিকে রার্নাস আপ বাউনিয়াবাধ ফুটবল দলের তুহিন ১ টি গোল দিয়েছে।
এরপরই শুরু হয় মেয়েদের হ্যান্ডবল খেলা। বেগুনটিলা আর বাউনিয়াবাধের মেয়েরা খেলা শুরু করতেই উৎসুক দর্শকদের মধ্যেও টান টান উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। সেসঙ্গে খেলোয়ারদেরকেও উৎসাহ দিতে দেখা যায়। কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে! দর্শকসারিতে মেয়ে খেলোয়ারদের অভিভাবকরাও খেলা উপভোগ করছিলেন। এই ম্যাচেও ২/০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় বেগুনটিলা মেয়ে হ্যান্ডবল দল। আছিয়া আক্তার সিতারা আর রোজিনা আক্তার মনি মুক্তা উভয়ে একটি একটি করে গোল দিয়েছে।
আছিয়া আক্তার সিতারা (১৫) কালশী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির শিক্ষার্থী। দুই বোনের মধ্যে ও ছোট। বাবা ব্যবসায়ী আর মা গৃহিণী। খেলাধুলায় পরিবার থেকে অনেক সহযোগিতা পায়।
অন্যদিকে রোজিনা আক্তার মনি মুক্তা ইসলামিয়া হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা ব্যবসায়ী আর মা গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় বিজয়ীরা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তারা বলেন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স আমাদের মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। খুব ভালো লাগছে।
রানার্স আপ দলের বাউনিয়াবাধ দোয়েল গ্রুপের মেয়েদের হ্যান্ডবল দলের খেলোয়াড় মুক্তা আক্তার (১৭), নিপা আক্তার (১৫), হাদিজা আক্তার (১৮)। কথা হলো তাদের সাথেও। নিপা আক্তার বাউনিয়াবাধ আইডিয়াল হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেনির ছাত্রী। বছর খানেক আগে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মাধ্যমে হ্যান্ডবল খেলায় যুক্ত হয়েছে। থাকেন বাউনিয়াবাধ ই ব্লকে। বাবা গাড়ি চালক আর মা গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে ছোট। বড় বোন মহিলা ডিগ্রি কলেজে পড়ে।
হাদিজা আক্তার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা ব্যবসায়ী আর মা গৃহিণী। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট।
তারা জানালেন, আনন্দ নিকেতন স্কুলে প্রতি সপ্তাহে সোম আর মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে হ্যান্ডবল অনুশীলন করেন। প্রশিক্ষক মরিয়ম তাদের অনুশীলন করায়। পরিবারও আমাদের উৎসাহিত করছে। এই প্রথম আমরা হ্যান্ডবলে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রীতি ম্যাচ’ এ অংশ নিলাম। অংশ নিয়ে খেলতে পেরেছি তাতেই আমরা খুশি।
খেলা দেখতে এসেছিলেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২ নং ওয়ার্ডের বিএনপি’র সাবেক কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, এডভোকেট নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, আসলাম হোসেন গাজী, কাজী বাদশা মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব।
মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খেলাধুলা, লেখাপড়ার মাধ্যমে তারা সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠছে। ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করে তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। এর ফলে তারা মাদকের দিকে ঝুঁকবে না। বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচে অংশ নেওয়ায় তারা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে খেলেছে। এভাবে অনুশীলন চালিয়ে গেলে তারা জাতীয় পর্যায়েও খেলতে পারবে আশা করি। ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পাশাপাশি আমরাও তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো খেলাধুলা চালিয়ে যেতে।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের স্পিরিট প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মারলিন পপি বলেন, এই খেলার মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী-যুবরা একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলবে। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী হয়ে উঠবে। নিজেদের সুরক্ষা নিজেরাই করবে, অন্যদেরকেও সহযোগিতা করবে। ভবিষ্যতে তারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই প্রত্যাশা করি।
ইউ