ফাইল ছবি
টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ভয়াবহ পতন ও লজ্জাজনক বিদায়ের সম্মুখীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। গুম-খুন, দুর্নীতি, নেতৃত্বের ভুলে এই দলটি ২০২৪ সালে জনরোষের শিকার হয়। ফলাফলস্বরূপ, দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। কার্যত বন্ধ রয়েছে দলটির অফিসিয়াল কার্যক্রম।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন এবং দেশব্যাপী গণবিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দলটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। অজ্ঞাত স্থান থেকে দলটির অনলাইন পেজে সীমিত কার্যক্রম চালানো হলেও মাঠ পর্যায়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক সংগঠনের। ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং সরকারের শক্তিপ্রয়োগের মুখেও দমানো যায়নি আন্দোলন। ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন ক্রমেই সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলায় শত শত শিক্ষার্থী নিহত এবং হাজারো আহত হয়। এর ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং গণভবন অভিমুখী জনস্রোত দেশব্যাপী সাড়া জাগায়।
২০২৫ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ নিজেদের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে দলটির নেতারা জনগণের সঙ্গে থাকার এবং অতীতের ভুল শুধরে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছেন। দলটির অফিসিয়াল পেজে নতুন বছরে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, ‘বিরূপ পরিস্থিতিতে শক্ত মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের শুভ ও কল্যাণময় সময় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা চরম নিপীড়ন, ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তবুও আমরা জনগণের সঙ্গে থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করব।’
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক স্বীকার করেছেন যে দলের ভুল এবং ব্যর্থতা রয়েছে। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, ‘ভল থেকে শিক্ষা নিতে পারলে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে। অতীত ইতিহাস আমাদের তাই বলে।’
তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের জনবিচ্ছিন্নতা এবং পলায়নপর মনোভাব ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে কঠিন করে তুলেছে। তবে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি অতীতে অনেক সংকট মোকাবিলা করেছে এবং ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নতুন বছরে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পুনর্গঠন করা।
এদিকে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০২৫ সাল আওয়ামী লীগের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা হতে চলেছে। জনগণের সমর্থন পুনরুদ্ধার এবং নিজেদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে দলটির কতটা সফলতা আসবে, তা সময়ই বলে দেবে।
ইউ