
ফাইল ছবি
রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনের ফেরার আবেদন জানিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। ২০০৭ সালে কলকাতায় তসলিমার লেখা নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তাকে শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রায় ১৮ বছর পর, এবার কী তসলিমার কলকাতায় ফেরার পথ খুলল!
সোমবার (১৮ মার্চ) রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে বক্তৃতা দেয়ার সময়, শমীক ভট্টাচার্য তসলিমাকে কলকাতায় ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারকে আবেদন করেন। তিনি বলেন, তসলিমাকে কলকাতায় থাকার অনুমতি দেয়া উচিত, কারণ তার কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া একসময়কার কংগ্রেস নেতাদের প্ররোচনায় হয়েছিল, আর বর্তমানে সেই নেতারা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সদস্য। তাছাড়া, শমীক তার বক্তব্যে তৎকালীন বাম সরকারেরও সমালোচনা করেন, এবং প্রশ্ন তোলেন, কেন তারা তসলিমার পক্ষে কোনও মন্তব্য করেননি, যদিও তারা নারীবাদী ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন।
শমীকের এই বক্তব্যে তসলিমা নিজেও খুশি হয়েছেন। ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি শমীক ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানান, এবং লেখেন, ‘বাম সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তের পর আর কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াননি।’ তসলিমা আরো জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার তার লেখা মেগা সিরিয়াল বন্ধ করে দিয়েছে, যা তার জন্য দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘জানিনা, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না, তবে শমীকের মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে, তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভায় শমীকের বক্তব্যের পর মন্তব্য করেছেন, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুত্ব সর্বাধিক হওয়া উচিত এবং ধর্মীয় মেরুকরণের খেলা না খেলতে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম শমীকের মন্তব্যে ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন এবং বলেন, ‘বিজেপি এবং তৃণমূল একে অপরের পরিপূরক হয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এছাড়া, সিপিএমের মতে, তসলিমা প্রসঙ্গকে ভোটের আগে তৈরি একটি ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে। তসলিমাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি কেন, এমন প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন তারা। ১৯৯৪ সালে তার বই লজ্জা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তসলিমা তার স্বদেশ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত। ২০০৭ সালে তার বই নিয়ে কলকাতায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পর সুরক্ষার জন্য তাকে শহর ছাড়তে বলা হয় এবং পরে দিল্লি ও জয়পুরে পুলিশের নিরাপত্তায় কাটিয়ে তিনি ইউরোপে চলে যান। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।
এবার, কলকাতায় তসলিমার ফেরার সম্ভাবনা এবং রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে রাজনীতি আরো গরম হয়ে উঠতে পারে।
ইউ