ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, পৌষ ৬ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

English

মতামত

জেলা পরিষদে আলেয়া জাহির : আমাদের প্রত্যাশা

মো. মাহমুদ হাসান

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২১ মার্চ ২০২৪

জেলা পরিষদে আলেয়া জাহির : আমাদের প্রত্যাশা

ছবি: মো. মাহমুদ হাসান

হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের ফলাফল গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পদত্যাগ করেছিলেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা: মুশফিক হোসেন চৌধুরী। শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত ছিল। বৃহত্তম বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটি সীমাবদ্ধ ছিল। একজন চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক মাঠ পরিক্রমা অতিক্রম করে আসা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী আর অন্যজন হবিগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলেয়া জাহির। মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি ছিল বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ। চুড়ান্ত হিসেবে বিজয় মাল্যটি আলেয়া জাহিরের ঘরে উঠে। একজন স্বজ্জন, বিনয়ী নারী নেত্রী হিসেবে আলিয়া জাহিরের বিজয় নিঃসন্দেহে অভিনন্দন যোগ্য!  

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আলেয়া জাহিরের বিজয়টি নানা কারণে ব্যতিক্রমী। প্রথমত: দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে তিনি প্রথম চেয়ারম্যান,যখন নির্বাচনটি দলীয় মনোনয়ন ছাড়া উম্মুক্ত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে তিনিই প্রথম নারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, যিনি জেলার স্থানীয় সরকারের সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। এর আগে বাংলাদেশে কোন নারী সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হননি, যদিও দলীয় মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার উদাহরণ আছে। নারীর ক্ষমতায়নের বিবেচনায়ও আলেয়া জাহির দৃষ্টান্ত হতে পারেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন নারী প্রগতিকে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের বিবেচনায় রাখছেন, সে দৃষ্টিকোন থেকেও তিনি বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। আর সিলেট বিভাগে তিনিই তো একমাত্র মহিলা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সে বিবেচনায় নারী জাগরণে তিনি তো এ বিভাগের দৃষ্টান্ত! এতোসব সুবার্তার মাঝে তাহলে কি কোন চ্যালেঞ্জ নেই? নিশ্চয়ই আছে। 

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নেই। তাই এ নির্বাচনটি জনগণের মাঝে তেমন আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরি করে না। তবুও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন জনমনে এক ভিন্ন রকম আগ্রহ তৈরি করেছিলো। এর পছনে দুটো কারণ দৃশ্যমান ছিল, প্রথমত আলেয়া জাহিরের প্রার্থীতা ঘোষনা আর দ্বিতীয়ত এডভোকেট আবু জাহির এমপির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে অবতীর্ণ হওয়া। আলমগীর চৌধুরীর রাজনীতির বয়স প্রায় চার দশক। ছাত্রলীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া অবধি হবিগঞ্জের আমজনতা তাঁকে এডভোকেট আবু জাহিরের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবেই দেখেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া অবধি আলমগীর চৌধুরীকেও বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন জননেতা সদর আসনের চার বারের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারী এডভোকেট আবু জাহির। যাঁর ফলশ্রুতিতে অনেক সিনিয়র কে ডিঙিয়ে জেলার রাজনীতিতে ক্ষমতাশীন দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনটি এখন তাঁর দখলে। পারিবারিক আবহে এগিয়ে চলার পথে এমপি পত্নীর বিপরীতে নির্বাচন কে কেন্দ্র করে যদি দীর্ঘ দিনের উষ্ণ সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়, তবে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ খ্যাত হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য সেটি হবে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

গত দুই মেয়াদে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী। দু'বারই তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একবার তার বিপরীতে এক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও, ক্ষমতাসীনদের চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই অর্থে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম ভোটাররা তাদের অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছিল। যেহেতু জেলা পরিষদের কান্ডারী হতে মুশফিক চৌধুরীকে কখনো বেগ পেতে হয়নি, তাই জেলার স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে তাঁর তেমন কোনো সখ্যতা ও গড়ে উঠেনি। পরিষদের সদস্যদের সাথে তার দূরত্ব টিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকা শহরে থাকতেন। তাকে অনুসরণ করে তার বিশ্বস্ত সিএ সাহেবের কর্মস্থলে উপস্থিতি ছিল তার মতোই আনুষ্ঠানিক। তাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও তিনি জেলা পরিষদ কে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নিত করতে সমর্থ হননি। এবারের নির্বাচনে আলেয়া জাহির কে পছন্দ করার পেছনে ভোটারদের উন্নয়ন চিন্তাটিও বিবেচনায় ছিল। এডভোকেট আবু জাহির হবিগঞ্জে ঈর্ষণীয়  উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর সহধর্মিনী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হতে পারে- ভোটারদের মাঝে এমন চিন্তাটিও কার্যকর ছিল। এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়ন কর্মকান্ডের দৃশ্যমান পরিবর্তন ও পরিষদ সদস্যদের নিয়ে জেলা পরিষদকে কার্যকর করাও হবে আরেকটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।


জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে-ঘাটে বক্তৃতার সুযোগ নেই। তাই প্রচার-প্রচারণা টি মূলত জেলার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবুও গণমাধ্যমে প্রচারিত সাক্ষাৎকার অনুযায়ী জেলাবাসি আলেয়া জাহিরের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অবহিত হয়। তিনি উন্নয়ন প্রকল্পে সম-বন্টনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পারিবারিকীকরণ থেকে মুক্ত থাকবেন এমন কথাও দিয়েছেন। স্থানীয় সাংসদের সহযোগিতায় উন্নয়নকে আরও বেগবান করবেন, অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। একজন দৃঢ়,স্থির মিষ্টভাষিণী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন বলেই জেলাবাসী বিশ্বাস করে। প্রচারণা ছিল, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে। নেতৃত্বে পারিবারিকীকরণ সংকট তৈরি করবে! অধিকাংশ ভোটার সে অভিযোগ কে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচনী ফলাফলে তাই দৃশ্যমান। 

বাংলাদেশের দুটো রাজনৈতিক দলই পারিবারিকীকরণের দোষে দুষ্ট। যথাযথ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় কেউ নেতৃত্ব পেলে, সেটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। সংকট তৈরি হয় তখনই, উত্তরাধিকার যখন নেতৃত্ব, পদ-পদবী আর ক্ষমতা লাভের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠে। মাঠ-ঘাটের রাজনীতি আর ত্যাগ-তিতিক্ষা নয় শুধুমাত্র উত্তরাধিকারের যোগ্যতায়, এমপি মন্ত্রী হওয়ার দৃষ্টান্ত জেলাবাসী দেখেছে। বিপরীতে আবু জাহির কোন উত্তরাধিকারে নয়, দলীয় আনুগত্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা আর নিষ্ঠার বিনিময়ে চারবারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলাবাসী বিশ্বাস করতে চায়, 

উত্তরাধিকার ও পারিবারিক বলয়ের বাহিরে গিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলেয়া জাহির স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবেন। হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ কে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে, তাঁর প্রচেষ্টা কে অব্যাহত রাখবেন। বিভাজন নয় মেধা, শ্রম, ঐক্য আর ভালোবাসা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন।  

ইউ

চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু চাঁদাবাজের পরিবর্তন হয়েছে: হাসনাত আবদুল

স্টল ভাড়া কমানোর দাবিতে বাংলা একাডেমিতে অনশনের ঘোষণা 

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের আহ্বান 

ইউসেপ বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারপারসন হলেন ড. ওবায়দুর 

রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না

চাঁদাবাজরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সতর্ক থাকুন: হাসনাত

বেলাবতে ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু, ছেলে গ্রেপ্তার

৬ মাসে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দাবি জামায়াতের

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান: শহীদদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ

সোনাইমুড়ীতে হোসেনপুর ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদরাসার উদ্বোধন

জার্মানিতে গাড়িহামলায় দুই জন নিহত, সৌদি নাগরিক গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে পাওয়ারলুম কারখানা মালিককে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা, আটক ৪

রাস্তায় বের হলে দায়িত্বশীল আচরণ করুন: ডিএমপি কমিশনার

সাগরে নিম্নচাপ, চার বন্দরে সতর্কতা

হাসান আরিফের দাফন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে