সংগৃহীত ছবি
১৯৯৩ সালে অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা যখন নিজেদের একটি সংগঠন করলেন, সকল সদস্যই ছিলেন পুরুষ। নারী সাংবাদিক সদস্য যিনি কিনা শুধু মাত্র অর্থনীতি নিয়ে লিখেন, এমন জন পাওয়া ছিল দুষ্কর। নারী রিপোর্টারের সংখ্যাও ছিল অতি নগন্য।
তিন দশকে সেই ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ইআরএফ এ যুক্ত হয়েছেন মাত্র ১৯ জন নারী সাংবাদিক। মোট সদস্য সংখ্যা যদিও ২৪১ জন। কিন্তু তাই বলে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকরা নারী নেতৃত্ব বিমুখ নন, তা প্রমাণিত হয়েছে ২০২১ সালে, যখন তারা প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করলেন শারমীন রিনভীকে।
সাংবাদিকতায় সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকতায় সামগ্রিকভাবে নারীর সংখ্যা কম। তথাপি পর পর দুই বার সাধারণ সম্পাদক এবং ধারাবাহিক ভাবে আরো দু'বার প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফরিদা ইয়াসমিন। প্রেসক্লাবের ইতিহাসে প্রথম নারী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সিংহভাগ পুরুষ সাংবাদিকদের ভোটেই কিন্তু নির্বাচিত হন এই নেতা নারীগন। তবে সংবাদ মাধ্যমগুলো কতটা নারী বান্ধব তা নিয়ে বির্তকের অবকাশ রয়েই যায়।
মাঠে কাজ করা নারী সাংবাদিকের সংখ্যা বাংলাদেশে খুবই কম। গবেষণায় উঠে এসেছে মাত্র ১০ শতাংশ সাংবাদিক নারী। এর মাঝে বেশির ভাগই আবার ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করেন। তবে যে তরুন প্রজন্ম অনেক উৎসাহ নিয়ে সাংবাদিকতায় আসে, কিছুদিন পরই ভাটা পড়ে তাতে। মিডিয়া হাউজগুলোতে যৌন হয়রানী, বেতন বৈষম্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্ট বন্টন সঠিক ভাবে না করা, প্রাপ্য পদন্নতি না দেয়ার অভিযোগ দেশের নারীদের মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে নিরুৎসাহিত করছে।
অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের পেশায় আসার পর যে প্রশিক্ষণ বা বেসিক জানতে হয় তার প্রশিক্ষণ আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এতে নারী সাংবাদিকরা কাজ করতে গেলে শুরুতেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। কেউ কেউ বেছে নেয় নারী ও শিশু বা স্বাস্থ্য খাত। মিডিয়ার বিনিয়োগ না থাকায় অনুৎসাহিত হয় অর্থনীতির জটিল বিষয় নিয়ে লিখতে বা খবর পরিবেশনে।
যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, অর্থ প্রতিমন্ত্রী নারী, সেখানে অর্থনীতি সাংবাদিকতায় নারীর নগন্য উপস্থিতি পীড়াদায়ক বটে।
নারীদের অর্থনীতি নিয়ে লিখতে সুযোগ করে দিতে হবে মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিদেরই। যেহেতু প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে অর্থ-বানিজ্য বীটটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় আছে, সেহেতু নারীদের এই সংক্রান্ত এসাইনমেন্ট দেয়া জরুরি।
লিখতে হলে জানতে হবে। তাই নিজের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নারীদেরও জোর দেয়া জরুরি। ডিজিটাল যুগে ভালো লেখা বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চাপা থাকে না। অর্থনীতি নিয়ে লিখতে হলে জানা দরকার খটমটে কিছু শব্দ ও তার অর্থ। নয়তো এসাইনমেন্ট এ গিয়ে ভিমরি খেতে হবে অনেককেই।
অর্থনীতি নিয়ে লিখতে হলে অর্থনীতির বা সাংবাদিকতার ছাত্রী হতে হবে তা নয়। হাতে কলমে শেখার জন্য লেগে থাকা জরুরী। সহজে যদি নতি স্বীকার করে প্রথমেই ডেস্কে চাকরি বা সংবাদ উপস্থাপনা বেছে নিলে তো আর মাঠের অভিজ্ঞতা নেয়া হয় না। অজানা থেকে যায় অর্থনীতি ও বানিজ্যের বহু রহস্য।
নারী সাংবাদিকদের বলি, হোক অর্থনীতি বা অন্য বিষয়, নিজেকে সে বিষয়ে দক্ষ করে তোলার বিকল্প নেই।
সাংবাদিকদের অফিস টাইম বলে কিছু নেই। তিনি যেখানেই থাকেন সর্বদা অন ডিউটিতে। তাই সমাজ ও পরিবারের সহযোগীতা ছাড়া সাংবাদিকতা করা কঠিন। একজন নারী একজন মা, স্ত্রী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের ভরসাস্থল। তিনি চাইলেও অনেক বিষয় এড়াতে পারেন না। নারী সাংবাদিকদের প্রায়োরিটি সেট করে একটা কর্ম পরিকল্পনা খুব জরুরী।
অর্থনীতি বানিজ্য নিয়ে লিখতে হলে প্রচুর ডাটা নিয়ে কাজ করতে হয়। জানতে হয় কি করে ওপেন ডাটা সহজে বিশ্লেষণ করে সংবাদ পরিবেশন করতে। নারী সাংবাদিকদের আয়ত্ত করতে হবে কিছু ডিজিটাল টুল যেমন গুগল স্প্রেডশিট বা এক্সেল। থাকতে হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাবহারের জ্ঞান। নতুন প্রযুক্তি আয়ত্ত করে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকরা সারা বিশ্বে তৈরী করছে নানান চমৎকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
চাকুরীতে পদোন্নতি না পাওয়া সিনিয়র নারী সাংবাদিকদের ঝরে পড়ার একটি বড় কারণ। সাংবাদিকতায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই বা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, অনেক নারী সাংবাদিকদেরই অভিযোগ থাকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রাধান্য দেয়া হয়। পদোন্নতির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে একটা স্বাধীন রিভিউ কমিটি থাকতে পারে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এর ১৩১ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী সম্পাদক পেল রুয়ালা খালাফ কে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদায় রয়েছে প্রচুর নারী। তাই আমাদের সাংবাদিকদের ও পিছিয়ে থাকলে চলবে না। দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠানের জন্য এতটাই অপরিহার্য করে তুলুন যাতে আপনাকে হারাতে ভয় পান নিয়োগকারীরা। যেহেতু নারীর সংখ্যা পেশায় অনেক কম এ দেশে, নিজেদের কর্ম দক্ষতা প্রমান করার বিকলপ নেই। আপনার কর্মদক্ষতা দেখে যাতে আপনাদের সম্পাদক বা বস আগ্রহী হন আরো নারী নিয়োগে। এজন্য সর্বোপরি দরকার মানসিকতার উন্নয়ন, হোক সে কর্মক্ষেত্র বা পরিবার।
//এল//