
ছবি: সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে করা হলো 'নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা'। আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ জানান, এবার শোভাযাত্রার নাম হচ্ছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলছেন, আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অমঙ্গল দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যেই মূলত শোভাযাত্রার নামকরণ করা হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শান্তি ও কল্যাণের বার্তা দেওয়া হয়েছিল।
তবে জানা যায়, সঙ্গীতশিল্পী ওয়াহিদুল হক এবং ভাষা সৈনিক এমদাদ হোসেনের প্রস্তাবে আনন্দ শোভাযাত্রা নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা রাখা হয়।
নাম পরিবর্তনের সঙ্গে এর পরিসরও বড় হয়। আগের শোভাযাত্রাগুলো যেখানে শুধু ছাত্র-ছাত্রী এবং জুনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সকল শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীরাও অংশগ্রহণ করেন।
আবার নাম পরিবর্তন করায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশিষ্ট সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু অগত্যা ও বৈশিষ্ট্যহীন শিরোনামে তার মতামত জানিয়েছেন।
নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল চারুকলার ছাত্র শিক্ষকদের একটি সাংস্কৃতিক উদ্যোগ যা জাতীয় মাত্রা পেয়ে ইউনেস্কোর ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত হয়। আগের সরকারগুলোর সঙ্গে মত ও পছন্দের মিল-অমিল কিছু ঘটলেও কোনো সরকার হস্তক্ষেপ করেননি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হস্তক্ষেপ করলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টার নেতৃত্বে। পশ্চাদমুখী পরিবর্তন ঘটানো হলো চারুকলার কিছু শিক্ষকের মাধ্যমে। এটি অন্যায় হয়েছে। নাগরিক অধিকার ও সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতার পরিপন্থী।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম পরিবর্তন অনুচিত হয়েছে। এটা প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক মনোভাবপ্রসূত; শোভাযাত্রাটির চরিত্র পরিবর্তনের লক্ষ্যে। 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' নামটি অগত্যা ও বৈশিষ্ট্যহীন হয়েছে। এটা বর্ষবরণেরই অনুষ্ঠান, মানুষ আনন্দই করে। মাঝখান থেকে 'মঙ্গল' শব্দের ভাবার্থটি চলে গেল; তা হচ্ছে আনন্দের সঙ্গে অমঙ্গলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মঙ্গলকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া। এই পরিবর্তন ঘটানোর জন্য চারুকলার ছাত্র-শিক্ষকদের ব্যাপকভিত্তিক মতামত নেওয়া ও বিতর্কের গণতান্ত্রিক আয়োজন করা হয়নি। হয়েছে সরকারের কারসাজিতে। সংস্কৃতির ওপর এই চড়াও হওয়াই হচ্ছে সুপ্ত ফ্যাসিবাদী মনোভাব।।
//এল//