আলমগীর দারাইন,সংগৃহীত ছবি
কানাডায় যারা অস্থায়ী ভিসা নিয়ে আসতে চাচ্ছেন, তাদের আগামী বছরগুলোতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসা, টেম্পোরারী ওয়ার্ক পারমিট, ও ভিজিট ভিসায় এসে স্থায়ী হতে চান তাদের জন্য সামনের বছরগুলো সহজ হবে না। বিগত কয়েক বছর ধরে কানাডায় অধিক অস্থায়ী বাসিন্দা আগমনের ফলে বিশেষ করে বাসা ভাড়া ও বাড়ির দাম দ্বিগুনের বেশি বেড়ে গেছে। সাথে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি , মুদ্রাস্ফিতি , এবং কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে টুড্রো সরকারের উপর সমালোচনা ও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকারও নড়েচড়ে বসেছে।
সেই কারণে সরকার অস্থায়ী বাসিন্দা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২০৩১ সাল নাগাত ৩.৯ মিলিয় নতুন বাসস্থান নির্মানের বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এই আবাসন সংকট কমতে আরও পাঁচ বসরের অধিক সময় লাগবে।
ইদানিং বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে কানাডায় পড়ার জন্য আসতে চাচ্ছেন। IELTS (International English language Aptitude Test) এ ৬.৫ বা তার থেকে বেশি স্কোর থাকলে কানাডার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। আঠারো থেকে বিশ হাজার কানাডিয়ান ডলার একবছর ডিপ্লোমা জন্য খরচ হয়। মাষ্টার ডিগ্রী কিম্বা পি, এইচ, ডির জন্য ষাট হাজার বা তার উপরে টিউশন ফি খরচ হয়। যদি কেউ কোন স্কলারশিপ অথবা অনুদান যোগার করতে না পারে, সেই ক্ষেত্রে পুরা খরচ তাকেই বহন করতে হয়। এতো গেলো টিউশন ফি। এরপর থাকা, খাওয়া, যাতায়াত খরচ তো আছেই। টিউশন ফি একজন কানাডিয়ান বা পারমানেন্ট রেসিডেন্স থেকে তিনগুণ বেশি হয়। এই বিশাল অংকের খরচ ও স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অনিশ্চিয়তা নিয়ে কেবল মাত্র বাংলাদেশের উচ্চ মধ্যেবিত্ত ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তানগন ঝুঁকি নিতে পারে।
এর পর ঠান্ডা আবহাওয়া, ভাষাগত সমস্যা, কালচারাল সমস্যা তো বড় চেলেঞ্জ । একবছরের ডিপ্লোমার জন্য, একবছরে কাজের অনুমতি এবং দুবছরের ডিপ্লোমা জন্য তিন বছররের কাজের অনুমতি চাইলে পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ যোগাড় করা সহজ নয়। বাংলাদেশে যারা সোনা, রুপার চামচে খেয়ে রাজপুত্র, রাজকন্যার মতো বড় হয়েছেন তাদেরকে কানাডায় এসে নিজে রান্না করে খাওয়া, থালাবাসন ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয়।
অন্য দিকে সাধারণ পরিবারের সন্তানেরা পিতামাতার জমা অর্থ, জায়গা, ফ্লাট, বাড়ি বিক্রি করে পড়তে আসাটা, অনেক বড় ঝুকিপূর্ণ বলে আমার ধারনা। অনেকে ওয়ার্ক পারমিট, ভিজিট ভিসা নিয়ে আসেন। ভিজিট ভিসা নিয়ে এসে কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া খুবই কঠিন। পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন। এরপর কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের LMIA (A Labour Market Impact Assessment)জব অফার প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে কানাডিয়ান এমপ্লয়ারের বলতে হয় উক্ত পদে কানাডিয়ান সিটিজেন বা পারমানেন্ট রেসিডেন্স পাওয়া যায়নি তাই বিদেশি কর্মচারি নিয়োগ দিচ্ছি। এটাও জোগাড় করা সহজ নয় । এই তিন প্রকার অস্থায়ী বাসিন্দার ভিসা করতে মিডিলম্যান কর্তৃক শত শত আবেদনকারী প্রতারিত হচ্ছেন।
মিডিলম্যান কমিশন নিচ্ছে। সাধারণ পরিবার থেকে এইধরনের অনিশ্চিত ঝুঁকি নেওয়া মোটেই উচিৎ নয়। ভারতে সরকারি চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন। সরকারি চাকরিতে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। সেই ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করলেই চাকরির সুযোগ পায়। একজন ছাত্রের ডাক্তারী পড়তে হলে ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ লক্ষ রুপির মতো খরচ হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সেই কারনে বেশির ভাগ ভারতীয়রা বিদেশে পারি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো বিদেশে পড়ার খরচের থেকে দেশে পড়ার খরচ কম। এবং দেশে বসবাস করে বাবা-মার সাথে থেকে লেখাপড়া অনেক সহজ।
বাংলাদেশে এখনো কম পুঁজিতে নানা ধরনের ছোট ব্যবসা শুরু করার সুযোগ আছে। সেই ক্ষেত্রে দেশের টাকা দেশে থাকবে, দীর্ঘদিন প্রবাসী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার থেকে, পিতামাতার হোটেলে খেয়ে সুখে দু:খে বাবা মার পাশে থেকে কেরিয়ার গড়া অনেক সহজ। কানাডায় আসার পর ইদানীং অনেক অস্থায়ী বাসিন্দা অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপে চলে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। অনেক ভারতীয়রা ফেরত যাচ্ছেন।
কারন থাকা খাওয়া বাসাভাড়া এখানে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সেই কারণে আজ যারা বাংলাদেশ থেকে কানাডায় এসে স্থায়ী হতে চান কানাডার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা ও গবেষণা করে আসার সিদ্ধান্ত নিবেন। নইলে পরে পস্তাবেন।
লেখক,ক্যালগেরি কানাডা।
//এল//