
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার, ভরণপোষণে সমান অধিকারের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা এই প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন তারা।
প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ক সুপারিশে সংবিধানে পরিবর্তন এনে নারী- পুরুষ সমতার নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন আইনে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। যেসব আইনের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- অভিন্ন পারিবারিক আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন, ধর্ষণ আইন, নাগরিকত্ব আইন, সাক্ষী সুরক্ষা আইন ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে নারীর অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার বিষয়ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক ভূমিকা তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
খাসজমি বন্দোবস্ত ও বনজ সম্পদে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মৎস্যজীবী হিসেবে নারীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বীকৃতি ও সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত নীতিমালার সংস্কার করে জলমহাল ইজারা গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সম্পত্তিতে নারীদের সমান উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা
জরুরি।
অপরদিকে আনুষ্ঠানিক খাতে নারীদের জন্য অনুকূল কর্মসংস্থান নীতি তৈরি করে প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করা, যেমন শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র, কর্মক্ষেত্রের জন্য আচরণবিধি প্রণয়নের মাধ্যমে যৌন হযরানি মুক্ত কর্ম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও সহায়তায় ব্যবসায়িক সংগঠনের ভূমিকা শক্তিশালী এবং নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য ঋণের শর্তাবলি সহজ ও নারীবান্ধব করতে হবে। জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল কর্মপরিকল্পনায় (২০২১) নারীর প্রয়োজন ও প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নারী উদ্যোক্তারা যেন কেবল প্রচলিত ও কম লাভজনক ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়িক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ই-কমার্সের জন্য একটি আইনগত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করা এবং ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ও নবায়ন করার প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন। শ্রম বাজারের সাথে সম্পৃক্ত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত শিক্ষাপ্রদান ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে যুব নারীদের কর্মসংস্থানে প্রবেশ সহজ করতে হবে। এছাড়া গৃহকর্ম ও পরিচর্যার কাজের বোঝা কমাতে হবে, এটার স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত মোট ১১টি সংস্কার কমিশনের একটি হচ্ছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর এই কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
ইউ