
সংগৃহীত ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জন পলাতক নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের বাইরে অবস্থানরত এসব ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের নিকট পৃথক তিন দফায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা ছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে, তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, আদালত, রাষ্ট্রপক্ষ অথবা তদন্ত সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) এই আবেদন করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আবেদনে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনাসহ বাকিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণাদি সংযুক্ত করে আবেদন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদ ছাড়া অন্য ১০ জনের বিষয়ে গত ১০ এপ্রিল এনসিবি আবেদন জমা দেয় ইন্টারপোলের কাছে। এর আগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও সুপারিশ পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে।
শেখ হাসিনার বিষয়ে ইন্টারপোলকে রেড অ্যালার্ট জারির অনুরোধ করা হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে। অন্যদিকে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারপোলে আবেদন করা হয়। এর আগে ঢাকার একটি আদালত তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য নির্দেশনা দেন।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সেই চুক্তির আওতায় ফেরত আনার উদ্যোগও নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এই প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘসূত্রতা সাপেক্ষ—এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার মামলা। এ মামলায় তার সঙ্গে আসামি করা হয়েছে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও। এছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে একটি এবং গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় আরেকটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও অন্যান্য প্রসিকিউটরদের ভাষ্যমতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামীকাল রবিবার এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
//এল//