
সংগৃহীত ছবি
‘ভাত দে হারামজাদা/তা না হলে মানচিত্র খাবো’- জনপ্রিয় এই পঙক্তির স্রষ্টা, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত কবি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির বাড়িটির একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাড়িটির একাংশ ভেঙে ফেলে।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রী দিলারা হাফিজ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক হিসেবে বরাদ্দ পান। বরাদ্দনামায় উল্লেখ করা হয়, এই বরাদ্দের দ্বারা বাসার ওপর কোনো অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।
এ বিষয়ে সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ এবং সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসর নেওয়া প্রয়াত কবির স্ত্রী অধ্যাপক দিলারা হাফিজ বলেন, কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই আজ সকালে পুলিশ এসে বাড়ির পশ্চিম অংশ ভেঙে ফেলে। এরপর তারা আমাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসবাবপত্র ও জরুরি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান মুলতবি ঘোষণা করে।
‘বাড়িটি নিয়ে আদালতের স্টে অর্ডারও আছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিত্যক্ত ভবনটি আমাকে বসবাসের জন্য দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে আমরা এই ভবনে বসবাস করি। এমনকি কবি রফিক আজাদের অধিকাংশ কবিতাও এই ভবনে বসে লেখা।
‘এক ছাদের নিচে আমাদের বাসার পাশের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে’ জানিয়ে দিলারা হাফিজ বলেন, ২০১৬ সালে রফিক আজাদ মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা তার স্মৃতি রক্ষার্থে এই ভবনটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে বারবার চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনি আমাদেরকে জানান, এটা আইনের বিষয়, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে আজ সকালে ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। তারা বাড়িটি ফাঁকা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ও বেঁধে দেননি।
তবে ভিন্ন কথা বলছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির মিরপুর বিভাগ-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৈয়ব-উর-রহমান আশিক গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযানে কবি রফিক আজাদের বাড়িটি ভাঙা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সেখানে চারটি একতলা ভবন রয়েছে, যার সবগুলো ভাড়াটিয়াদের দখলে। এর মধ্যে কবি রফিক আজাদের বাসভবনসহ দুটি ভবনের বিষয়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ আছে। আমরা রফিক আজাদের বাড়ির পেছনের দুটি ভবন ভেঙে ফেলেছি।
এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, কবি রফিক আজাদের বাসভবনের কোনো অংশ ভাঙা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকার-এর সম্পাদক ছিলেন। রোববার পত্রিকাতেও তিনি নিজের নাম ঊহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি টাঙ্গাইলের মওলানা মুহম্মদ আলী কলেজের বাংলার প্রভাষক ছিলেন।
কবির প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে অসম্ভবের পায়ে, সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে, চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি, প্রেমের কবিতাসমগ্র, বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে, বিরিশিরি পর্ব, রফিক আজাদ শ্রেষ্ঠ কবিতা, রফিক আজাদ কবিতাসমগ্র, হৃদয়ের কী বা দোষ, কোনো খেদ নেই, প্রিয় শাড়িগুলো প্রভৃতি।
কবি রফিক আজাদ ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক পান। এ ছাড়া হুমায়ুন কবির স্মৃতি (লেখক শিবির) পুরস্কার (১৯৭৭), আলাওল পুরস্কার (১৯৮১), কবিতালাপ পুরস্কার (১৯৭৯), ব্যাংক পুরস্কার (১৯৮২), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), কবি আহসান হাবীব পুরস্কার (১৯৯১), কবি হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার (১৯৯৬) ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা (১৯৯৭) লাভ করেন।
//এল//