ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ১৯ এপ্রিল ২০২৫

English

জাতীয়

শিশুদের মাঝে সহিংসতার বিস্তার নতুন করে ভাবার সময় এনে দিয়েছে

রীতা ভৌমিক 

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪৮, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

শিশুদের মাঝে সহিংসতার বিস্তার নতুন করে ভাবার সময় এনে দিয়েছে

ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম

ছোট্ট আবু বক্কর সিদ্দিকের প্রাণবন্ত হাসিমাখা মুখটা আর দেখা যাবে না ফুলকলি-৭ এর ইসিডি সেন্টারে। প্রাক শৈশব শিক্ষা গ্রহণ করতে এসে খেলাধূলা, কবিতা আবৃত্তি, লেখাপড়া সব কিছুতেই রেখেছিল মেধার স্বাক্ষর।  খেলাধূলা, কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে পেয়েছে পুরস্কারও। 

শিশুদের প্রতি  যৌন সহিংস আচরণে ঝরে গেল একজন মেধাবী  শিক্ষার্থীর প্রাণ।  মাত্র চার বছর বয়সেই  ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স পরিচালিত “ফুলকলি-৭” ইসিডি সেন্টারের শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক সমাজের নিষ্ঠুর কয়েকজন  মানুষের বিকৃত রুচির বলি হলো।   মংগলবার ১৫ এপ্রিল বিকাল ৪ টায় রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদের ব্লক এর ২২ নম্বর রোডে আলহামদুলিল্লাহ বাইক সার্ভিস সেন্টার  নামে  একটি হোন্ডা গ্যারেজে তার পায়ুপথে  বাতাস ঢুকানোর পরই পেট ফুলে যায়, বমি করতে করতে অচেতন হয়ে পড়ে।   এই হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনাটির কারণে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে তার। 
বুধবার ১৬ এপ্রিল  ভিকটিম আবু বক্কর সিদ্দিকের মা মোছাঃ আয়শা বাদী হয়ে  ১৬ /৪/২৫, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোডে রাজধানীর পল্লবী থানায় আকাশ (১৪), রাজু (২০), সুজন (৩৬) ও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে শিশু হত্যা মামলা করেন। মামলা নং ৩৩। 

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের পল্লবী থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ সম্পর্কে  বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে শিশুটির পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণে মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সাথে যুক্ত একজন অজ্ঞাতনামাসহ চার জনের বিরুদ্ধে শিশু হত্যা মামলা করেছেন শিশুটির মা। আকাশ (১৪) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মা মোছাঃ আয়শা জানান,  গতকাল (১৫ এপ্রিল) সকালে  “ফুলকলি-৭” ইসিডি  সেন্টারের  ক্লাস শেষ করে সকাল সাড়ে ১১টায় ছোট ছেলে আবু বক্কর বাসায় ফিরে আসে। তিনি একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার স্বামী বাস চালক।  বড় ছেলে (১১ বছর) বাউনিয়াবাদের ব্লক এর বেরিবাধ সংলগ্ন মোঃ রাতুল ও সুজনের আলহামদুলিল্লাহ বাইক সার্ভিস সেন্টার  নামে  একটি হোন্ডা গ্যারেজে কাজ করে।

সেখানে গতকাল দুপুরে আনুমানিক ৩টার দিকে ছোট ছেলে  বড় ছেলের কর্মক্ষেত্রে গেলে এই নৃশংস ঘটনার শিকার হয়। গ্যারেজের মালিক সুজন বড় ছেলেকে দোকানে কলা-রুটি আনতে পাঠায়। এই সুযোগে, তারা ছোট ছেলে আবু বক্করের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করে—গাড়ির হাওয়া দেওয়ার পাইপ ওর পায়ুপথে ঢুকিয়ে হাওয়া দেয়। অতিরিক্ত চাপে ওর পেট ফুলে যায়,  বমি করে এবং মলদ্বার আর মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
তিনি বলেন,  বড় ছেলে আমাদের সংবাদ দিলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দ্রুত আবুকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

বড় ভাই মো. জিহাদ জানায়, গ্যারেজে ফিরে এসে দেখি, ভাই মাটিতে  পড়ে আছে। পেট ফুলে গেছে। ভাইয়ের কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে বলে, পায়ে বাতাস দেওয়ায় আবুর পেট ফুলে গেছে। পরে মুখের ভেতর পাম্প করে বাতাস ঢুকিয়ে পেটের বাতাস বের করার চেষ্টা করেছে। তাদের কথা বিশ্বাস হয়নি। আবুর প্যান্ট খুলে দেখি মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। ভাই বমি করতে করতে জ্ঞান হারায়। 

অভিযুক্ত আকাশ (১৪) জানায়, মজা করার জন্য করেছিলাম। বুঝতে পারিনি এমন হবে।

আবু বক্করের বাবা জাবেদ আলী বলেছেন, স্হানীয় লোকজন আমাকে খবর দেয় আবুকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলে আর নেই। এরা পরিকল্পনা করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। নইলে আমার ছোট ছেলে গ্যারেজে যাওয়ার সাথে সাথে কেনো বড় ছেলেকে খাবার কিনে আনতে দোকানে পাঠাবে! শত্রুতা করে এটি করা হয়েছে। 

আবু বক্কর সিদ্দিকের মা মোছাঃ আয়শা ও তার পরিবারের সদস্যদের কান্নায় পল্লবী থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। সন্তান হারানো মায়ের একটাই কথা তারা আমার ছেলেকে একা পেয়ে মজার ছলে হত্যা করল। আমার বুক খালি করল। যারা এই অপরাধ করলো তাদের মধ্যে হৃদয় নামে একজন ছিল। তার নাম অজ্ঞাতনামা লিখলো।  পুলিশের খাতায় কেন নামটা লিখলো না!

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা বলেন, এখন শিশুদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। স্মার্ট ফোনে শিশুরা ক্ষতিকর অ্যাপসের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখে। বাংলাদেশ  টেলিকমিউনিকেশনের সাথে  এ ব্যাপারে কথা বলে,  শিশুর জন্য  ক্ষতিকর অ্যাপসগুলো বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। 
তিনি আরো বলেন, এখানকার ছেলেরা খেলাধুলা, ক্লাবের সাথে যুক্ত নয়। এক্ষেত্রে তারা যাতে এই অ্যাপসের মাধ্যমে  সহিংসতামূলক কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে পারে  এজন্য  সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।   রাষ্ট্রে যখন অস্থিরতা থাকে তখন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার বেশি হয়।

এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর মৃত্যু নয়, বরং আমাদের সমাজের ভঙ্গুরতা এবং শিশুদের মাঝে সহিংসতার বিস্তার নতুন করে ভাবার সময় এনে দিয়েছে। শিশু সুরক্ষা নিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এখনই আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইউ

সাজানো নির্বাচনে জিতেছিলেন সাকিব: প্রেস সচিব

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তরায় বিক্ষোভ

সরকারের কাজ-কামে দেশবাসী উদ্বিগ্ন: দুদু

রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

যৌথবাহিনীর অভিযানে ৮ দিনে সারাদেশে আটক ৩৯০

পরিবেশবান্ধব বস্ত্রের প্রসারে কাজ করতে হবে: রিজওয়ানা

‘৩৭ টি স্পটে প্রায় ৩০০ শিশু রাস্তায় বসবাস করছে’

আদিবাসীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ৬ দাবি

সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের ঘোষণা

ভিসা জালিয়াতি: সৌদিতে ৫ শতাধিক হজযাত্রী আটক

গাজীপুরে বাসার মধ্যে ২ শিশুর মর*দেহ

‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মিই বড় সমস্যা’

বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার

 ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে নারী ফুটবলাররা

‘রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে আবার জিতব’