
ফাইল ছবি
মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ফেব্রুয়ারি থেকে ও মার্চে বেশি ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং এর মার্চের প্রতিবেদনে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে ফেব্রুয়ারিতে ১৭২ ও মার্চে ৪০৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় শেখ হাসিনা সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলায় আসামির সংখ্যা ফেব্রুয়ারিতে ৩৬০ ও মার্চে ১ হাজার ৯১৪জন। আসামি (অজ্ঞতনামা) ২০০ ও ১হাজার ৮৪০ জন। রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩১টি ঘটনায় ৩১৯ জন ও ৫২টি ঘটনায় ৪৪৭ আহত হয়েছেন।
২১ টি ঘটনায় ৩৮ ও ১৮ টি ঘটনায় ৩৪জন সাংবাদিক সহিংসতা নির্যাতন, হামলা, আহত, হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশু সহিংসতায় ২৯৫টি ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৭, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ২, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯, যৌন নিপীড়নের শিকার ২৬, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৩৬
এবং ৪২৮ টি ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩২, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৫, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে ৩, ধর্ষণের চেষ্টা ৬১, যৌন নিপীড়নের শিকার ৩৪, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৩৮ জন।
সোমবার (১ এপ্রিল) মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের মানবাধিকার (এমএসএফ) পরিস্থিতি মনিটরিং এর মার্চের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মার্চ মাসে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে । নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা বেড়েছে।
একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ও পালানোর চেষ্টাকালে মৃত্যু এবং পুলিশী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক অর্ন্তদ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েই চলেছে তেমন বেড়েছে দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার আন্দোলন বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে ঢালাও ভাবে গ্রেফতার কমলেও তা এখনও উদ্বেগজনক।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। কারা হেফাজতে মৃত্যু কিছুটা কমলেও ধারাবাহিকতা রয়েই গেছে।
এ সময়ে সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর, মন্দির দখলের চেষ্টা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হওয়ার পরও সীমান্তে হতাহতের ঘটনা অব্যাহত আছে, অপরদিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র আরকান আর্মি ও মিয়ানমারের নৌবাহিনী দিন দিন আক্রমাত্মক হয়ে উঠছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে, গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা বন্ধ করা যায়নি ফলে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও এর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সকল নাগরিকের সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানিয়েছে।
ইউ