
ফাইল ছবি
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন মো. হাসান শাহারিয়ার। অন্যদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, উচ্চ স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৪০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের মূল্য ১৯০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিড়ির প্রতি শলাকার মূল্য কমপক্ষে ১ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে তামাকপণ্যের উপর কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধি” শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রিসোর্স পার্সন প্রজ্ঞার হেড অফ প্রোগ্রামসের মো. হাসান শাহারিয়ার এ দাবি তুলে ধরেন।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় নারী মৈত্রীর কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সংগঠনটির প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাসরিন আকতার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ ফার্স্ট এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোরশেদ নোমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ এডিটর মো. জাহিদুল ইসলাম, চ্যানেল আই এর সিএনই মীর মাসরুরজামান; নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা-এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম, মাদারস’ ফোরাম অ্যাগেইনস্ট টোব্যাকোর জয়েন্ট কনভেনার এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি, তামাক বিরোধী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়াহ এবং তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য।
মো. হাসান শাহারিয়ার বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তারা যে কোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে।
বক্তারা জানান, সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কমবে এবং প্রায় ১৮ লক্ষ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি, ২৪ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত হবেন।দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগের ফলে প্রায় ১৭ লক্ষ ১৩ হাজার অকালে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে, সরকার সিগারেট থেকে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারবে, যা বর্তমান আয়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সিগারেটের উপর সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ১ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
সোহরাব হাসান বলেন, কর বাড়িয়ে তামাকের ক্ষতিকর দিক বন্ধ করা যাবে না। কর বাড়লে সিগারেটের দাম বাড়বে। আমাদের লক্ষ্য তামাকমুক্ত বাংলাদেশ করতে চাইলে গণআন্দোলন দরকার। তাহলে আগামী ৩০ বছরে এটা ৩০ শতাংশ থেকে নেমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অধুমপায়ীদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়ায় উৎসাহিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে ধূমপানের হার কমানোর লক্ষ্যে। তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দামের পার্থক্য কম থাকায় ভোক্তাদের সহজেই একটি স্তর থেকে অন্য স্তরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে এই দুটি স্তরকে একীভূত করে মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই
গবেষণা অনুযায়ী, তামাক পণ্যের বিদ্যমান কর কাঠামোর সংস্কার করা হলে ধূমপানের হার ১৫.১ শতাংশ থেকে কমে ১৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর ফলে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং প্রায় ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানের অভ্যাস গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকবে। পাশাপাশি, সরকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে, যা জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মীর মাসরুরজামান বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের দাম ও কর বাড়ানো প্রস্তাবে দৃঢ় থাকতে হবে। মিডিয়ায় তামাক বিরোধী ক্যাম্পেইন সহ সু লিখিত লেখা প্রকাশ করা।
শিবানী ভট্টাচার্য বলেন, সচেতনতা, আইনের কঠোরতা, কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাককে না করতে হবে।
আব্দুস সালাম মিয়াহ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকে তামাকবিরোধী অধ্যায় যুক্ত করার দাবি জানান।
শাহীন আকতার ডলি বলেন, তামাক ব্যবহার কমাতে কর একটি ধাপ, একটি পদক্ষেপ। তামাক বিরোধী আইন দ্রুত পাশ করাতে পারলে আমরা এর সুফল পাবো।
সভায় তামাক বিরোধী তরুণ ফোরাম, গার্লস গাইড এর সদস্যরা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরাও বক্তব্য দেন।
ইউ