ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, , ১৭ মার্চ ২০২৫

English

জাতীয়

শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে আলাদা শিশু অধিদপ্তরের দাবি

উইমেনআই প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ১৬ মার্চ ২০২৫

শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে আলাদা শিশু অধিদপ্তরের দাবি

ছবি সংগৃহীত

শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে  আলাদা শিশু অধিদপ্তরের দাবি জানিয়েছে শিশু অধিকার বিষয়ক  বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গড়ার পাশাপাশি মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতো ‘শিশু বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ প্রতিষ্ঠায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে ।

রবিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির অডিটোরিয়ামে  শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকার বিষয়ক এনজিওদের প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উঠে আসে। যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইন ও সালিশ  কেন্দ্র,  ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং  সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর পরিচালক নিশাত সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেয় আইন ও সালিশ  কেন্দ্রের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি,  ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের কর্মসূচি ও পরিকল্পনার পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস এবং  সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার সুশাসনের পরিচালক আবাদুল্লাহ আল মামুন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক  যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা বা হত্যা  চেষ্টার ঘটনায়  দেশব্যাপী প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা  ঘোষণা করে আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সংকট শুধু শিশুদের  জীবনকে ধ্বংস করছে না, বরং আমাদের সমাজের মূল ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে  মেয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে। সারাদেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। 

তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারের কাছে একাধিকবার দাবি জানালেও অপরাধীরা প্রায়শই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে  বেরিয়ে যায়। তারা আবার নির্যাতনে লিপ্ত হয়। ২০১৬ সালে ৫ বছর বয়সী একজন শিশুকে ধর্ষণের দায়ে কয়েক বছর আগে একজন অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদÐ হয়। সাম্প্রতিক তার জামিন হয়েছে। মাগুরায় ৮ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ করে যে, জনপরিসরে, নিকটাত্মীয় এমনকি  নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নয় শিশুরা। যদিও অপরাধীরা  গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমরা আশু ও যথাযথ তদন্ত, বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।

তিনি  আরো বলেন, শিশু অধিকার বাস্তবায়নে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকলেও শিশু কল্যানের বিষয়টি মূলতঃ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ তিনটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব  দেখা যায়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মতো শিশুদের জন্য  কোনো আলাদা অধিদপ্তর  নেই যা শিশুদের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে সমন্বয়কারী সংস্থা হিসাবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বতী সরকারের মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতো ‘শিশু বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ প্রতিষ্ঠারও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো ১৭ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলাগুলোর দ্রæত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা । অপরাধীদের দ্রæততম সময়ে শাস্তি নিশ্চিত করা যাতে তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে  বেরিয়ে  যেতে না পারে। বিচার প্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে  শেষ করার মধ্য দিয়ে আইন উপদেষ্টার প্রতিশ্রæতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা। শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মতো একটি  শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা। শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক একটি সংস্কার কমিশন জরুরি ভিত্তিতে গঠন করা । যা সকল অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো তা প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর করা। পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের দ্বারা  যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা। যাতে ভুক্তভোগীরা নিরাপদে তাদের অভিজ্ঞতা  শেয়ার করতে পারে। শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ এবং সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করা । শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে একটি স্বতন্ত্র মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা। নির্যাতিত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পুনর্বাসন  সেবা নিশ্চিত করা। সকল নাগরিক, বিশেষ করে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ক্ষতিকর সামাজিক রীতি ও  জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার সংস্কৃতি পরিবর্তনে জাতীয় পর্যায়ে প্রচার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।  ভুক্তভোগীদের সহায়তার ব্যবস্থা শক্তিশালী ও সহজপ্রাপ্য করা। যার মধ্যে কাউন্সেলিং, আইনি সহায়তা, ও পুনর্বাসন  সেবা অন্তর্ভুক্ত করা। নিরাপদ পরিবেশ  তৈরি করতে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা হিসেবে কমিউনিটি  নেতা, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের সক্রিয় সংলাপে যুক্ত করা। সকল থানায় শিশু  হেল্প  ডেস্ক কার্যকর করা। সহিংসতার শিকার শিশু, শিশুর পরিবার ও ঘটনার সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষা আইনগত ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। হটলাইনকে কার্যকর করা। ১০৯ ও ১০৯৮ নম্বরে আসা অভিযোগ এবং তার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জবাবদিহিতামূলক নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করা । নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪/৭ নতুন হটলাইন চালু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। ০১৩২০-০০২০০১, ০১৩২০-০০২০০২ ও ০১৩২০-০০২২২২। একাধিক হট লাইনের পরিবর্তে বিদ্যমান নম্বরগুলো আরও কার্যকর করে বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্টতা হ্রাস করা ।  জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ক্রমিক রাষ্ট্রীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার মাধ্যমে শিশু অধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।

বক্তারা বলেন, আমাদের কন্যা শিশুদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাদের নির্ভয়ে  বেড়ে ওঠার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ  তৈরি করা আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। আমরা একত্রিত হয়ে  মেয়ে শিশুদের প্রতি সহিংসতা নির্মূল করি এবং সমতা, সম্মান ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ে তুলি।

কবিতা বোস বলেন, ধর্ষণ আমাদের সমাজে কত প্রকট আকার ধারণ করে আছে।  প্রতিটি পরিবারের সাথে বিষয়টি জড়িয়ে গেছে। কেউ আমরা প্রকাশ করছি, কেউ প্রকাশ করছি না। কিভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা যায়, এটা নিয়ে সারা বাংলাদেশে কাজ করছি। কিন্তু সমাজের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কাজ অনেক নগন্য। সারা দেশে ছেলে এবং মেয়ে উভয় শিশুর সুরক্ষায় আমরা কাজ করছি। আমাদের উদ্বেগের বিষয় পরিবার থেকেই তারা সুরক্ষা পায় না। এর দায় আমাদেরও আছে। 

আবাদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা মেয়েশিশুকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবো সেটা ভাবি। তাকে ভালো-মন্দ সম্পর্কে অবগত করার চেষ্টা করি। কিন্তু ছেলে শিশুকে বড় করার ক্ষেত্রে এ ধরণের কথা খুব কম বলি। প্রতিরোধের প্রথম পর্যায় হচ্ছে পরিবারকে জানতে হবে,  তার ছেলে শিশুকে  যে কোনো বয়সী নারীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ শেখানো। মেয়েশিশুকে জানতে হবে তাকে নিজেকে সুরক্ষা করার কৌশল।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, নীরবতা ভাঙ্গার সংস্কৃতি ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স প্রথম শুরু করেছিল। পরিচিতজনদের দ্বারা শিশু অনবরত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আমরা প্রতিকারের কথা বলবো, কিন্তু প্রতিরোধ, প্রতিরোধ, প্রতিরোধ এটি হলো সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ শিশুর কথাকে বিশ্বাস করতে হবে। শিশু যদি বিপদাপন্নতার কথা বলে সেটাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার। তাহলে আমরা প্রাথমিকভাবে পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবো।

তামান্না হক রীতি বলেন,  গত ১০ বছরে ৫ হাজারেরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর প্রতিরোধে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে ঘাটতি রয়ে গেছে।

ইউ

আ.লীগ আমলের হয়রানিমূলক ৬২০২ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ

সংস্কার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি দল মতামত দিয়েছে

পাপন পরিবারের ৩৩ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করল আদালত

স্বর্ণের দাম বাড়লো

কুরআনের হাফেজদের নোয়াখালীতে সংবর্ধনা দিল ছাত্রশিবির

ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের মেয়েকে অবরুদ্ধ থেকে উদ্ধার

এ বছর স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ থাকছে না: স্বরাষ্ট্র সচিব

সাশ্রয়ী দামে টেকসই ফার্নিচার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার: রিজওয়ানা

নোয়াখালীতে ঘুমন্ত পুত্রবধূকে ধর্ষণ, শ্বশুর গ্রেপ্তার

ড. ইউনূসের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক ২৮ মার্চ

প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ডের সম্ভাবনা

শিক্ষিকাকে হেনস্তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ  

শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে আলাদা শিশু অধিদপ্তরের দাবি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. অনিন্দিতা দত্তকে অবরুদ্ধ

সাত কলেজ নিয়ে হচ্ছে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’