
সংগৃহীত ছবি
কর্মক্ষেত্র থেকে বিরতি নেওয়া নারীদের কাজে ফেরাতে ব্র্যাকের ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ শীর্ষক কর্মসূচিটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। প্রায় ১১০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে ১৫ জনকে বেছে নেয়া হয়েছে যারা ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগামী ছয় মাস কাজ করবেন।
এ ছাড়া নির্বাচিত ১০০ জন প্রার্থীর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মশালা, মেন্টরিংসহ পেশাগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করা হবে যেন এই দক্ষ পেশাজীবী নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী কাঙ্খিত কাজটি খুঁজে নিতে পারেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ব্রিজ রিটার্নশিপের আনুষ্ঠানিক যাত্রা উপলক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
এ সময় ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে মৌরী ইসরাত খান, এলিজাবেথ মারান্ডী, ফারাহ্ মাহবুব, তারানা মোস্তারী এবং ইফ্ফাত সুলতানা তাদের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন । ব্র্যাকের মাইক্রোফাইনান্স কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক অমিত কান্তি সরকার এবং সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাবের হেড অফ ইনোভেশন সামিন নাওয়ার কাশমী পৃথক আলোচনায় বক্তব্য দেন। সিটি ব্যাংকের হেড অফ ট্যালেন্ট ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড এইচআর এনালাইসিস শফিউল ইসলাম, গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের পরিচালক, হেড অব সার্ভিস ডেলিভারি এন্ড এক্সপেরিয়েন্স শায়লা রহমান, জিপিএইচ ইস্পাত-এর চিফ পিপল অফিসার শারমিন সুলতান, ব্র্যাক ব্যাংকের সিনিয়র এইচআর বিজনেস পার্টনার ফারহানা শারমিন সুমি এবং গ্রোএনএক্সেল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জুলফিকার হোসেন নারীর কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয়তার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর ।
আসিফ সালেহ্ বলেন, “নারীদের মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বের অসাধারণ গুণাবলি। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ জোর দিয়ে বলেছেন, সত্যিকারের নেতৃত্ব গড়ে ওঠে সহমর্মিতা, দৃঢ়তা এবং অন্যদের এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ওপর, যা নারীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান। তা স্বত্ত্বেও নেতৃস্থানীয় পদে নারীদের দেখা যায় না। এই ব্যবধান কমাতে হলে আমাদের মধ্যম পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত নারীদের নিয়োগ দিতে হবে। তাদের পেশায় ধরে রাখতে হবে এবং পেশাগতভাবে তাদের এগিয়ে যাওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, যা অভিজ্ঞ মেধাবী পেশাজীবী নারীদের কর্মক্ষেত্রে পুনঃপ্রবেশ এবং নেতৃত্বের অবস্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার গণ্ডি পেরিয়ে এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে নয়, বরং টেকসই সাফল্যের কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।”
মৌটুসী কবীর বলেন, “অনেকেই কাজ থেকে বিরতি নেওয়াটাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেন। কিন্তু এই বিরতি হচ্ছে সাহসের প্রতীক। একটি প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার থেকে বিরতি নেয়া, অনেক বড় ঝুঁকি আর সাহসের বিষয়। আমরা তাঁদের এই সাহসিকতাকে সম্মান জানাতে চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্রিজ রিটার্নশিপের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যে নারীরা কোনো কারণে পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের কর্মক্ষেত্রে পুনঃপ্রবেশে সহায়তা করা। ছয় মাস মেয়াদের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে-কলমে শিক্ষা, পেশাগত উন্নয়ন, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে নতুন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। ব্রিজ রিটার্নশিপে অংশগ্রহণকারীরা ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের তত্ত্বাবধান, গবেষণা ও অন্যান্য কাজে যুক্ত থাকবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারীদের কর্মজীবন থেকে বিরতি নেওয়া এবং পুনরায় কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবেদনকারীদের এক-চতুর্থাংশ (২৫.৮ শতাংশ) মাতৃত্বকালীন সময়টিকে চাকরি ছাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সামাজিক চাপ (৬.৩ শতাংশ), পরিবার দেখাশোনার দায়িত্ব (২.৫ শতাংশ) এবং বিরূপ কর্মপরিবেশ (০.৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, রিটার্নশিপ প্রোগ্রামে যোগদানের ক্ষেত্রে তাঁদের মূল অনুপ্রেরণা ছিল ক্যারিয়ারে উন্নতি (৩৪.৫ শতাংশ), আর্থিক স্বাধীনতা (৩২ শতাংশ), আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি (২২.৭ শতাংশ) এবং পরিবারের জন্য অবদান রাখা (১০.৮ শতাংশ)।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, স্বপ্ন এবং কানাডিয়ান হাইকমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চাকরি থেকে বিরতি নেওয়া নারীদের পেশাগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে যেন বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। সফলভাবে ব্রিজ রিটার্নশিপ সম্পন্ন করার পর অংশগ্রহণকারীদের চাকরির জন্য ব্র্যাক এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুপারিশ করা হবে।
//এল//