
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
‘জাতীয় বাজেটে জেন্ডার বাজেট অন্তর্ভূক্তিকরণ’ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে (কবি সুফিয়া কামাল ভবন, ১০/বি, ১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, এবং সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘নারী আন্দোলনের বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণে বিশেষজ্ঞদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের গবেষণা এবং মতামতের ভিত্তিতে নারীর অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক ও শিক্ষিত দেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো অপরিহার্য।’
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে জেন্ডার বাজেট গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল। আমাদের অর্জন থাকা সত্ত্বেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছি। তাই জেন্ডার বাজেট আলাদাভাবে উপস্থাপন এবং তার ফলাফল মূল্যায়ন করার জন্য মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’
জনা গোস্বামী সুপারিশ উপস্থাপনকালে জানান, ৯টি জেলার প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, জলবায়ু মোকাবিলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো এবং নারীদের পারিবারিক কর্মসক্ষমতার উন্নয়ন। এছাড়া নারীদের জন্য আর্থিক সেবায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বৃদ্ধি করার বিষয়গুলোও প্রাধান্য পায়।
সেলিম রায়হান আলোচনায় বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটের মেথডলজি সম্পর্কে কিছু সমস্যা রয়েছে, যা পরিবর্তনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া গার্মেন্টস খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স স্কিম চালু করা প্রয়োজন।’
শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ‘মাদরাসায় নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তিনি স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানোর জন্য কাচামালের ওপর কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন।’
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটের কার্যকর মনিটরিংয়ের জন্য একাউন্টিং সফটওয়্যার আইবাস ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজেটে নারীর বিশেষ প্রয়োজনের জন্য বিশেষায়িত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।’
এই প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী এবং সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।
এছাড়া সভায় উপস্থিত আলোচকরা নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক মতামত ও প্রস্তাব দিয়েছেন, যা দেশের জাতীয় বাজেটে জেন্ডার বাজেট অন্তর্ভূক্তিকরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
ইউ