
সংগৃহীত ছবি
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার ( ১০ মার্চ) , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যৌন সহিংসতা এবং নারীর প্রতি অব্যাহত নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছেন।
ধর্ষণবিরোধী এ মানববন্ধনে বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিহা ইয়াসমিন রোজি, অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা বক্তব্য দেন। বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
৮ দফা দাবির মধ্যে অবিলম্বে সকল ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ শুরু করা, অনলাইনে নারী হ্যারাজমেন্টের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি ও ১৫ দিনের মাঝে আসামি গ্রেফতার করা, সকল স্কুল কলেজে নারী প্রতি সহিংসতা ও হ্যারাজমেন্টবিরোধী সেল গঠন, ধর্ষণের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীল রিপোর্টিং, অনলাইন সহিংসতা ও ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলা, আর্থিক বোঝা থেকে ভিক্টিমদের মুক্তি,
ধর্মের নাম ব্যবহার করে নারীর প্রতি হয়রানি, নির্যাতন বাসহিংসতা বৈধ করা যাবে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ❝আমরা সমঅধিকারের কথা বলি, আমরা সমতারবাংলাদেশের কথা বলি, আমরা বলি এসডিজি গোলস ২০৩০ জেন্ডার ইকুয়ালিটি নিশ্চিত করবে। অথচবাংলাদেশ এখনো নারীর সমান অধিকার থেকে বহুদূরে।সর্বপ্রথম নারীর প্রাণের নিরাপত্তা দিতে হবে।❞,
তারা আরো বলেন, ❝দালিলিক প্রমাণ, চাক্ষুষ প্রমাণ, সাক্ষ্য প্রমাণ, মেডিক্যালরিপোর্ট, চিকিৎসকের বর্ণনার পরও গণজাগরণ, গণআন্দোলন, শতশত নারীরা রাস্তায় স্লোগান, মানববন্ধন, অনশন করছেন- তবুও আমাদের উপদেষ্টা মণ্ডলী বলেন, আরো তিনমাস সময় লাগবে বিচার করতে! এই সময় তো আমরা মুনিয়া হত্যাকাণ্ডেও দিয়েছিলাম, তনু হত্যাকাণ্ডেও দিয়েছিলাম। আপনারা বলবেন সে তো স্বৈরাচারী সরকারের আমলের কথা, এতো জনগণের সরকার। তাহলে আমরা জানতে চাই কেন এই জনগণের সরকার এই একান্ন শতাংশ জনগণের জন্যে এখনো যথাযথ হয়ে উঠতে পারলো না।❞
এছাড়াও তারা দেশ ও জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ❝কেবল নারীকেই যতোদিন প্রশ্নের সম্মুখীন করা হবে, কেবল নারীকেই যতোদিন লাজ-লজ্জা, ধম্মকম্ম, উচিত-অনুচিত শেখানো হবে ততোদিন পর্যন্ত আমাদের ছেলেরা বখাটে থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত আমাদের ছেলেরা ধর্ষক থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত আমাদের ছেলেরা খুনী থাকবে। প্রশ্ন করতে হবে বমাকে - কেন ভাইকে নজর হেফাজত করার কথা বলছেন না। প্রশ্ন করেন এলাকার ধর্মের পথপ্রদর্শককে কেন ধর্মকে নারীকেন্দ্রীকরণ করে ফেলছেন? নতুবা শান্তি আসা সম্ভব নয়।❞
ড. সাবিহা ইয়াসমিন রোজি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্ষণ কোনো ব্যক্তিগত ঘটনা নয়— এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজে প্রচলিত বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এর জন্য দায়ী। এই দেশে এখনো নারী নিরাপদ নন; সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভয় তাদের ঘিরে ধরে। নারীর পোশাক ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন তোলা হয়। এসব সমস্যার সমাধান ছাড়া আমরা কখনোই একটি সুস্থ ও সমতার সমাজ আশা করতে পারি না।”
অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “কেন আমাদের স্বজনের ওপর আঘাত এলেই আমরা সোচ্চার হই? কেন কেবল নিজের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যার বাইরের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে আমরা ব্যর্থ হই? আজকের প্রশাসনের অনেকেই একসময় আমাদের মতোই শিক্ষার্থী ছিলেন, তারাও নারী অধিকার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের কাছে আমাদের আবেদন— সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অন্যায়ের বিচার করুন এবং দ্রুত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয় যেন এই পরস্পর ঘৃণার অবসান ঘটে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয় বরং একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আমরা সেই যাত্রায় সফল হবার স্বপ্ন আজও দেখি। এই শতবর্ষীয়ান স্বপ্নকে কোনোভাবেই বৃথা হতে দেয়া যাবে না। কেননা এই স্বপ্ন বৃথা গেলেই পৃথিবীর ধ্বংসের মুখে পড়বে।
//এল//