
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এবং জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে এবং একটি সমতাপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ১৪টি দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
শনিবার (৮ মার্চ ) সকাল ১১ টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে (৬৭ টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবেশের শুরু হয়। আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।
সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশী কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমি, জাতীয় নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, শক্তি ফাউন্ডেশন এর উপ-পরিচালক নিলুফা বেগম এবং আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কএর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা। ঘোষণা পাঠ করেন কর্মজীবী নারীর কাজী গুলশান আরা দীপা। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিবাদী সংঙ্গীত পরিবেশন করেন সানোয়ারা জাহান নীতু। নৃত্য পরিবেশন করেন মুক্তা ঠাকুর ও তার দল। সমাবেশে বক্তব্য শেষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে ১৪ টি দাবি সম্বলিত ঘোষণা পাঠ করেন কর্মজীবী নারীর কাজী গুলশান আরা দীপা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক।
১৪টি দাবির মধ্যে রয়েছে, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা। সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সম অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। নারীর অবৈতনিক পারিবারিক কাজের স্বীকৃতি দিয়ে তা জিডিপিতে অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা। সংরক্ষিত আসন সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বাড়ানো। জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণ করা। নীতি নির্ধারণীর সব পর্যায়ে নারীর সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ এর ৯০ নং অনুচ্ছেদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। নারী গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং এবিষয়টিকে শ্রম আইনে অর্ন্তভূক্ত করা। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌননিপীড়ন বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করা। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১২ এর বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নারীকে অবমাননা করে যে সব প্রতিবেদন প্রকাশ/প্রচার করা হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা। অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা, অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'বৈষম্যবিরোধী আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১) (গ) এর উপর হতে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭-এর কন্যার বিয়ের বয়স সংক্রান্ত বিশেষ বিধান বাতিল করে আইনের বাস্তবায়ন করা। এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করা।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি ক্রমাগত চলমান এই দুঃসময় আমরা কাটাবোই। অন্ধকার কাটিয়ে আলো নিয়ে আসবো। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তির পথে হাঁটবো। তিনি সরকারের প্রতি যেকোনো মূল্যে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জোর দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, সমসুযোগ আদায় করে নিতে হবে, সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সিডও সনদের সংরক্ষিত দুইটি ধারার উপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে, বাল্যবিয়ে বন্ধ সহ সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার প্রদান করতে হবে।
খুশী কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জনপরিসরে, বাসে নারীরা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এসকল ঘটনায় অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে, প্রতিবাদ করার পরও কোন পদক্ষেপ নেই। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশের নারী সমাজ সব বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রার পথ মসৃণ নয়। এদেশের আদিবাসী- সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা নানাভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিকসময়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী নারীর মর্যাদা ও অধিকারকে ক্ষুণœ করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি নারীর অর্জনকে ধরে রাখতে নারী বিদ্বেষী শক্তিতে প্রতিহত করার পাশাপাশি সবাইকে সোচ্চার হতে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।
শাহনাজ সুমি বলেন, অর্ধেক জনগোষ্ঠীর নারী আজ কোথাও নিরাপদ নয়। নারীসহ সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।
সাহিদা পারভীন শিখা নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
নিলুফা বেগম বলেন, আজ ঘরে বাইরে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বর্তমানে নারী নির্যাতনকারী ছাড়া পেলে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকল সংগঠনকে নারী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, শুধু আদিবাসী নারী নয় যেকোনো নারী সহিংসতা শিকার হলে তার বর্ণ, গোষ্ঠী এবং শ্রেণী বিবেচনা না করে ঘটনার প্রতিকারের জন্য সবাইকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।
ইউ