
সংগৃহীত ছবি
মবতন্ত্র এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপর আঘাত প্রতিরোধ করার প্রত্যয় নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) উদীচীর এবারের আয়োজনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়-- "একুশ মানে চেতনায় ধার, আসবে আলো কাটবে আঁধার"। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে উদীচী।
অমর একুশেতে সকাল ৭টায় নীলক্ষেত মোড়ে জমায়েত হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে’র নেতৃত্বে প্রভাতফেরিতে অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ এবং ঢাকা মহানগরের অন্তর্ভুক্ত গেন্ডারিয়া, বাড্ডা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কাফরুল, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন শাখা সংসদের নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বীর ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে উন্মুক্ত সড়কে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে উদীচী। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ।
অমিত রঞ্জন দে বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভ‚মি রচনা করেছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকতের আত্মবলিদান শুধু মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকারই ছিনিয়ে আনেনি, স্বাধিকারের সংগ্রামে পুরো জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। একুশের হাত ধরেই পরবর্তীতে শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, ৬৯’র সফল গণঅভ্যুত্থান শেষে ১৯৭১-এর সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। তাই, যতদিন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি থাকবে, ততদিনই বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে একুশে ফেব্রুয়ারি”।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয় গান, আবৃত্তি, নৃত্য ও পথনাটক। সমবেতভাবে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” এবং “ধন ধান্য পুষ্প ভরা” গান দুটি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কল্পনা খান ও জয়া সেন গুপ্তা। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে স্বরচিত পুঁথি পাঠ করেন তুষার চন্দন। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পীরা। একক নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী গেন্ডারিয়া শাখা সংসদের শিল্পী, তামান্না সিদ্দিকা নীলা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পরিবেশিত হয় পথনাটক “মুখোশ”। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নাজমুল হক বাবু। নাটকটিতে গত কয়েক মাস ধরে মাজার, লালন আখড়া, মন্দিরে হামলা, মব সৃষ্টি করে বইমেলায় স্টল বন্ধ করা, বসন্ত উৎসব ও লালন উৎসবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরা হয়। সংস্কৃতিবিরোধী এসব অপশক্তিকে প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বানও জানানো হয় এ পথনাটকে।
//এল//