ঢাকা, বাংলাদেশ

বুধবার, , ১২ মার্চ ২০২৫

English

জাতীয়

প্রতিটি শিশুর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান

উইমেনআই প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রতিটি শিশুর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান

সংগৃহীত ছবি

কর্তৃপক্ষকে শিশু সুরক্ষা প্রোটোকল পর্যালোচনা করার, শিশু আইন ২০১৩ এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার এবং প্রতিটি শিশুর জন্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।


সোমবার শিশুর সুরক্ষা ও কল্যাণে গণমাধ্যম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।


রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, যখন কোন শিশু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তখন তারা প্রবেশ করে তথ্য, বিনোদন এবং নতুন কিছু শেখার অসাধারণ সব সুযোগে ভরপুর এক জগতে। সেখানে আরও থাকে নতুন সব সংযোগ তৈরি করার সম্ভাবনা, আবার থাকে অজানা বিপদের ঝুঁকিও। সম্প্রতি এমন একটা ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে, যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের মাধ্যমে ১১ বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে তাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে উত্তরবঙ্গের একটি জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাটি দেশজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে; প্রশ্ন উঠছে কীভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে, শিশুরা সঠিক দিক নির্দেশনা পাচ্ছে কিনা এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট করা হচ্ছে কিনা।


তিনি আরো বলেন,  শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতন আচরণ করবে সেটা আশা করা ভুল। তাদের মস্তিষ্ক, আবেগ, মনো-সামাজিক ও শারীরিক বিকাশের কাজ চলমান থাকে। তারা দুর্বল ও অসহায়; তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা সমাজ হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে।


এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সব বিষয় এখনও সুস্পষ্ট নয়; তবে এমন সংবেদনশীল ঘটনা আমারা কীভাবে উপস্থাপন করছি তার উপর নির্ভর করে ভুক্তভোগীর মানসিক পুনরুদ্ধার, পুনর্ভারসাম্য স্থাপন ও সম্মানের বিষয়। ইউনিসেফ শিশুটিকে উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচেষ্টার প্রশংসা করে; সাথে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করে যেভাবে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও উপস্থাপন করা হয়েছে সেবিষয়ে, বিশেষ করে যেখানে শিশু সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন হয়েছে এবং মিডিয়ায় রিপোরটিং এর ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এই শিশুটিকে উদ্ধারের সময় যা যা ঘটেছে তা গভীর উদ্বেগজনক। পুলিশ দ্বারা সুরক্ষিত ও বেষ্টিত থাকার পরিবর্তে তাকে ক্যামেরায় সর্বসম্মুখে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যা তার মানসিক অবস্থাকে আরও নাজুক করে তোলে। শিশু আইন ২০১৩-এ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে যে এই ধরনের ঘটনা কীভাবে সামাল দেয়া উচিত। ধারা ৫৪(১)- এ কন্যাশিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রোটোকলের উল্লেখ রয়েছে – যেখানে বলা আছে, এমন পরিস্থিতিতে কন্যাশিশুদেরকে একজন নারী পুলিশ অফিসার দ্বারা সংবেদনশীলভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে হবে এবং এই সময় অবশ্যই শিশুটির আস্থাভাজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সহায়তার জন্য তার সাথে থাকবেন। এছাড়া, ধারা ৯১ -এ আইনের  সংস্পর্শে আসা শিশুদের জন্য শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাদের (চাইল্ড অ্যাফেয়ার্স পুলিশ অফিসার -CAPOs) ভূমিকার উপর জোর দেয়া হয়েছে। 
তবে এই ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে শিশুটির সাক্ষাত্কার টেপ বা রেকর্ড করা হয় এবং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় হল, সাক্ষাৎকারটির ফুটেজ তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয় শিশুটির পরিচয় গোপন না করেই - যা প্রমাণ দেয় যে আইন মানা হয়নি।

এমন পরিস্থিতে, সোশ্যাল মিডিয়ার (সামাজিক মাধ্যমের) এই অনৈতিক পোস্টগুলো অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা উচিৎ ছিলো। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো এই ভিডিওগুলো পরবর্তীতে অনেক মূলধারার মিডিয়াকেও ব্যবহার করতে দেখা গেছে - যদিও এই সকল মিডিয়াই এমন সংবেদনশীল ও নাজুক ঘটনা সামলানোর ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরর পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য গোপন রাখার আইন সম্পর্কে  অবহিত। মিডিয়া এমন বেশ কিছু ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজ বারবার শেয়ার করেছে;  এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হচ্ছে মিডিয়া তাদের বর্ণনায়  প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষকে শিশুটির 'বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিক' হিসাবে আখ্যায়িত করেছে - এভাবে একটি বিপজ্জনক ও ভুল ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

আমাদের সবার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত এই শিশুটি একজন ভুক্তভোগী। তার আমাদের দোষারোপ বা চুলছেড়া বিশ্লেষনের প্রয়োজন নেই, তার প্রয়োজন সুরক্ষা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজেকে সামলে নেবার সুযোগ ও সহায়তা। সে নিতান্তই একজন এগারো বছরের শিশু।
একজন ১১ বছর বয়সী শিশু, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে মানসিকরূপে সক্ষম নয়। কারণ শিশুটির মস্তিষ্ক, আবেগ এবং বিচার-বুদ্ধি সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হয়নি, এখনও তা বিকশিত হচ্ছে। কোনো শিশুই প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত নয়। আর কোনও প্রাপ্তবয়স্কেরও কখনই কোনও শিশুর বিশ্বাস, কৌতূহল বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে শোষণ করা উচিত নয়।

বাংলাদেশের আইন এ বিষয়ে খুবই স্পষ্ট। শিশু আইন ২০১৩-এ, সকল থানায় শিশুদের সাথে সংবেদনশীলতার সাথে কাজ করতে প্রশিক্ষিত চাইল্ড অ্যাফেয়ার্স পুলিশ অফিসারদের উপস্থিতির কথা এবং শিশু-সংবেদনশীল আদালত প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখিত রয়েছে। এটি আইনের সংস্পর্শে আসা প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

শিশুদের সুরক্ষায় মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নৈতিক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতায়  অবশ্যই শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তাদের পরিচয় গোপন করতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ছদ্মনাম কিংবা পরিবর্তিত কন্ঠস্বর ব্যবহার করতে হবে; পরিচয় সনাক্তকারী যেকোন বিবরণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। একজন ভুক্তভোগী শিশুকে চিহ্নিত করা যায় এমন তথ্য প্রকাশ করলে তা শিশুর উপর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 

এই সকল আইন বিশেষ কারণে বিদ্যমান; কারণ শিশুদের সুরক্ষা প্রয়োজন। কারণ শিশুদের দেখতে বা কথায় যতই পরিপক্ক বা পটু মনে হোক না কেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক সম্পর্কের জটিলতা বা প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা শোষণের বিপদগুলো সামলাতে অপারগ। যখন এই আইনগুলি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তখন এমন একটি সমাজ গড়ে উঠে যেখানে প্রতিটি শিশু সুরক্ষিত থাকে, মূল্যায়িত হয় , সম্মানিত বোধ করে এবং ভয় বা ক্ষতি ছাড়াই বেড়ে উঠার সুযোগ পায়। 
১১ বছর শিশুটির এখন যা দরকার তা হল মানসিক ক্ষত থেকে সেরে উঠার সময়, সুযোগ ও পরিবেশ এবং এটা তখনই সম্ভব যখন কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া এবং আমরা সকলে তার গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে সম্মান করব।

শিশুটির বয়স মাত্র ১১ – আমাদের এর চেয়ে বেশি কিছু জানার বোধ হয় প্রয়োজন নেই। এখন, আসুন তাকে সবাই মিলে রক্ষা করি।

//এল//

সামিট গ্রুপের ৫৪ কাঠা জমি জব্দের আদেশ

‘২০০ কোটির বেশি টাকা পাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে’

একইসঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন চায় এনসিপি

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

মাদক মামলায় খালাস পেলেন মডেল পিয়াসা

অলআউট অ্যাকশনে যাচ্ছে ডিবি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো যাবে না

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের ব্যাপারে যা বললেন টিপু

ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান

ঠাকুরগাঁওয়ে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ২ দিনেও উদ্ধার হয়নি 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪ খেজুর ব্যবসায়ীকে জরিমানা

আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ’র মন্তব্য

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ

পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা: বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ট্রেন

টেকসই অর্থনীতির জন্য প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য