ছবি সংগৃহীত
আসন্ন সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের ‘টোন’ ভিন্ন হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের এ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে আলোচ্যসূচির বিষয়ে বৈঠক শেষে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
সীমান্ত সম্মেলনের আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে এবার নতুনত্ব কিছু দেখছি না, সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “আপনি নতুনত্ব কোনটা চাচ্ছেন। নতুনত্ব হলো ওটা, আগে যেভাবে কথাটা বলত, এবার কথার টোন ভিন্ন হবে।”
আগামী ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে বুধবার প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর/সংস্থার প্রধানরা।
সভায় সীমান্ত হত্যা, জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, নদীর পানির সুষম বণ্টন, নদী থেকে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং নদীতীর সংরক্ষণমূলক কাজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তের সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আসন্ন সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী কী বিষয়ে আলোচনা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল আজকের এ সভার মূল উদ্দেশ্য।
সীমান্ত সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিনিধি ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের মধ্যে মোট চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিগুলো হলো:
ক। ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট, ১৯৭৪ (ব্রাইফ অ্যান্ড ডিসপোজাল অব এনক্লেভস অ্যান্ড ডিসপিউটেড ল্যান্ডস)।
খ। জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন ফর বর্ডার অথরিটিজ-১৯৭৫ (বর্ডার ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনস)।
গ। ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট প্রটোকল-২০১১ (এক্সচেঞ্জ অব এনক্লেভস/ডিসপোজাল অব ডিসপিউটেড ল্যান্ডস)।
ঘ। কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিবিএমপি)-২০১১ (বর্ডার প্যাট্রলিং, ফ্ল্যাগ মিটিং অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস)।
এছাড়াও, উভয় দেশের প্রয়োজনে জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে একে-অপরের সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আছে।
ভারতে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে সীমান্ত সংক্রান্ত ১২টি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। যেমন:
ক। বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করা।
খ। বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া/আটক বন্ধ করা।
গ। বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লংঘন/অবৈধ পারাপার/অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
ঘ। ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ।
ঙ। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভারত কর্তৃক অনুমোদনহীন উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণকাজ এবং বিএসএফের বাধায় বন্ধ থাকা বাংলাদেশ পার্শ্বের উন্নয়নমূলক কাজ নিষ্পত্তি করা।
চ। আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয়, এরকম চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন।
ছ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, নদী থেকে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রহিমপুর খালের মুখ পুনঃউন্মুক্তকরণ।
জ। বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতকারী/অপরাধী কর্তৃক আন্তর্জাতিক সীমানা লংঘন করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ করা।
ঝ। বিতর্কিত মুহুরীর চর এলাকায় বর্ডার পিলার স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা।
ঞ। বাংলাদেশের বর্তমান বিরজমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধ করা।
ট। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা।
ঠ। পারস্পারিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ।
ইউ