সংগৃহীত ছবি
জনস্বাস্থ্যের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সাচিবিক সহায়তাপূর্বক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা তুলে ধরতে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে দায়িত্ব দিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মোঃ সাইদুর রহমান।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডব়্প তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প-এর একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা সভায় এই ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য সচিব।
সাইদুর রহমান বলেন, শুধু ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করতেই আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। আমরা জনস্বাস্থ্যের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সাচিবিক সহায়তার বিষয়টি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে দায়িত্ব দিচ্ছি। এই সেলের দায়িত্ব হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা তুলে ধরা।
এই দুর্বলতাগুলোকে লিখিতভাবে তুলে ধরা এবং উপস্থাপন করতে ৩-৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে আগামী ১০ কার্যদিবস পর ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী বৈঠকে পেশ করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে আলোচনাকালে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য
ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করুক অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্ভাগ্যবশত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির কার্যপরিধিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়নি, গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ট্যাক্সের বিষয়টিকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষির অর্থকরী ফসলের তালিকায় তামাক রয়েছে। কৃষি পরিসংখ্যানে যদিও এটাকে পরিষ্কারভাবে নেশাজাতীয় ফসলের আওতায় রাখা হয়েছে কিন্তু এর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে একে অর্থকরী ফসল বলা হচ্ছে। এই তালিকা থেকে তামাককে অপসারণ না করা হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের গুরুত্ব কমে যায় এবং অকার্যকর হয়ে পড়ে। অপসারণটি এই সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অন্যতম কৃতিত্ব হতে পারে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি, ডব়্প-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান, সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) এবং ডব়্প-এর উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজহার আলী তালুকদার, মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া প্রমুখ।
চলতি বছরের ১ম দিনেই ই-সিগারেট/ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডব়্প।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে।
//এল//