সংগৃহীত ছবি
প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর কন্ঠস্বর গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। মূলধারার গণমাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষের ইস্যুগুলো সামান্যই গুরুত্ব পায়।
এক্ষেত্রে ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে স্থানীয় গণমাধ্যম বিশেষ করে কমিউনিটি রেডিওগুলো সমতলের নৃ-গোষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো আরো তৎপর হয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আরো ভূমিকা রাখতে পারে।
আজ সোমবার রাজধানীতে (৩০ ডিসেম্বর) গণমাধ্যম, যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি আয়োজিত প্রমোটিং দ্য ভয়েস অব প্লেইনল্যান্ড এথনিক মাইনরিটিজ ইন সিভিক স্পেস থ্রু কমিউনিটি মিডিয়া” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জাতীয় পর্যায়ের একটি শিখন বিনিময় অনুষ্ঠানে এ বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনেরা।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে সাবেক সচিব ও সমষ্টি’র চেয়ারপার্সন আবু আলম মো. শহিদ খান। সমষ্টি’র নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুরুজ্জামান এতে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের আওতায় প্রকাশিত ”প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর: কমিউনিটি রেডিও সহায়িকা” শীর্ষক টুলকিটের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আর্টিকেল১৯-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড-এর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এক বছরের প্রকল্পটি চাহিদাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক রেডিও অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেয় এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণদের অনুষ্ঠান প্রযোজনার নেতৃত্বে নিয়ে আসে।
শিখন বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তারা কমিউনিটি রেডিও অনুষ্ঠানগুলোতে ভূমি অধিকারসহ বিভিন্ন অধিকারকেন্দ্রিক বিষয়গুলো আরো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার ওপর জোর দেন। এছাড়া জলবায়ু ও পরিবেশগত বিপদাপন্নতা তুলে ধরে সেগুলো সমাধানের জন্য উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। পাশাপাশি ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিহত মানুষদের মামলাগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করে তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষ ও মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টারদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইস্যু নিয়ে বোঝাপড়ার দূরত্ব রয়েছে। এজন্য তাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি ও তৎপরতা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যমকে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন বক্তারা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী ৫০টি জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি রয়েছে, এর বাইরে থাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা অনেক সময় অধিকার বঞ্চিত হয়, এজন্য এ আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করার কথাও বলেন তারা। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় দলিলপত্র সংস্কার আনার কথাও বলেন তারা।
আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, কমিউনিটি রেডিওগুলোতে আরো দৃঢ়ভাবে প্রান্তিক আদিবাসীদের কথাগুলো সামনে তুলে আনতে হবে। পরিকল্পিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের সরকারের নজরে নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার এলাকা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
শিখন বিনিময় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান, কুমিল্লা বার্ড-এর সাবেক মহাপরিচালক এম খায়রুল কবির, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সেলিম সামাদ, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হেড অব ডিজিটাল জাহিদ নেওয়াজ খান, মোহনা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ বোরহানুল হক সম্রাট, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্জল প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান বিলু, একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শাহনাজ শারমীন, আরটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আতিকা রহমান, কমিউনিটি রেডিও বিশেষজ্ঞ ফারোহা সোহরাওয়ার্দি, বাংলাদেশ বেতারের উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) আবদুল হক, ইন্টারনিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলি, বিড ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শহিদ উদ্দিন আকবর, রেডিও মহানন্দার স্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস, রেডিও পল্লীকণ্ঠের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার মেহেদী হাসান, রেডিও নলতার স্টেশন ইনচার্জ মামুন হোসেন, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর প্রতিনিধি মনিক সরেন, অর্চনা মুন্ডাসহ অন্যরা।
প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেডিও মহানন্দা, সাতক্ষীরার রেডিও নলতা ও মৌলভীবাজারের রেডিও পল্লীকণ্ঠ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণদের সম্পৃক্ত করে মুখোমুখি ও অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ ও সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, মানবাধিকার সুরক্ষা, সেবাপ্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরেন। বিভিন্ন গ্রামে ধারণকৃত বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে তৎপর করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হয়েছে বা সমাধানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
উইমেননিউজ২৪