সংগৃহীত ছবি
বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ আলম বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার নারীদের কথাই বলা হয়। নারীরা যে যুদ্ধ করেছেন সেকথা আলোচনায় সেভাবে আসে না। মায়েরা সহযোগিতা না করলে আমরা নয় মাস শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারতাম না। একাত্তরের সেই মায়েদের সাহসিকতার কথাও কেউ বলেন না। শুধু বলা হয়, মায়েরা মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছেন।
শনিবার দা ডেইলি স্টার সেন্টার মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৭১ এ মায়েরা : মুক্তিযুদ্ধে মায়েদের অবদান শীর্ষক আলোচনা সভায় বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হাবিবউল্লাহ আলম একথা বলেন।
এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কর্মী এড. সুলতানা কামাল, সাঈদা কামাল, সাংস্কৃতিক কর্মী রেশমা আমিন, সাংস্কৃতিক কর্মী মিনু হক, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মরিয়ম, রুমানা শফিক, নারীপক্ষ সদস্য শিরীন হক, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমিন, তাজিল মুরশিদ, রিজওয়ানুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
এড. সুলতানা কামাল বলেন, আমার মা সুফিয়া কামাল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোকে মোকাবেলা করেছেন। পাড়ার সবার রেশন কার্ড মাকে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেই রেশন তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীদের পুনবাসন করেছেন।
মা বেগম মুশতারী শফি সম্পর্কে রুমানা শফিক বলেন, একাত্তরের ২৭ মার্চ কারাগার থেকে লুট হওয়া দুই ট্রাক অস্ত্র আমাদের বাড়ির দোতলায় একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। এ খবর রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদারদের পৌঁছে দিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী আমার ডেন্টিস্ট বাবা আর মামাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারা আর ফিরে আসেননি। এরপরই শুরু হয়েছিল আমার মায়ের যুদ্ধ। মা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জল্লাদের দরবার লিখেছেন, অভিনয় করেছেন। কাগজ না থাকায় সিগারেটের বাক্সে, ঠঙ্গায় লিখতেন। স্বাধীনতার পর সাত সন্তানকে মানুষ করেছেন।
শিরীন হক মা জাহিদা খানম সম্পর্কে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শাহীন আনামের ভাই ওয়াসিফকে আমার মা আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। একদিন ওয়াসিফের জন্য তার মা বিরিয়ানি রান্না করে এনেছিলেন। মা তাকে বলেছিলেন ওয়াসিফ এখানে নেই। মা সেদিন বিরিয়ানি ফেরত দিয়ে কঠিনতা দেখিয়েছিলেন ওয়াসিফের নিরাপত্তার কথা ভেবে।
লুবনা মরিয়ম মা সুলতানা সারোয়ার সম্পকে বলেন, আমার মা ১৫ বছরের ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। রিফুজি ক্যাম্পে মায়ের সাথে আমরা দু বোনও কাজ করেছি।
মিনু হক মা আমেনা বিল্লাহ সম্পর্কে বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচাতেই মা আমাকে অজানার উদ্দেশ্যে সেদিন ঘর থেকে বেরুনোর অনুমতি দিয়েছিলেন। সেদিন মা বলেছিলেন , দেখা হবে হাশরের ময়দানে।
তাজিল মুরশিদ মা নূরজাহান মুরশিদ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবিতে আমার মা ভারতের দিল্লির রাজসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বক্তৃতায় মা অন্যান্য দেশের সহায়তাও চেয়েছিলেন।
শাহীন আনাম তার মা সম্পর্কে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের বাড়িতে ৪ মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। বিপদ জেনেও মা তা বাড়িতে লুকিয়ে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। এই অস্ত্রের কারণে ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের বাড়িতে রেট করেছিল।
সুমনা শারমিন মা মালেকা খান সম্পর্কে বলেন, যুদ্ধ পরবর্তী কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ধর্ষণের শিকার মেয়েদের পূর্ণবাসনে, তাদের মানসিক উন্নয়নে কাজ করেছেন আমার মা। সেসময় দুটো আইন বাস্তবায়ন করা হয় গর্ভপাত ও দত্তক আইন। দত্তক আইনের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের মাদার তেরেসার হাতে তুলে দিয়েছেন সুন্দর জীবন যাপনের জন্য।
//এল//