সংগৃহীত ছবি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে প্রাকাশ্যে জনসম্মুখে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩০ বিশিষ্ট নাগরিক।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়েছেন ৩০ বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি যে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু ২২ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে ওষুধ কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। তার ভাষ্যমতে, এ সময় স্থানীয় জামায়াত কর্মী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেয় তারা। ঐ ঘটনায় উপস্থিত জড়িত আরো কয়েকজন হলেন কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম, অহিদুর রহমান, পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন, কামরান হোসেন। শুধু জুতার মালা পরিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তা ভিডিও করে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। সঙ্গত কারণেই তিনি প্রচন্ড মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং তার নিরাপত্তাও বিপন্ন। তাই তিনি এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
এই ঘটনা সম্পর্কে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনার শিকার আব্দুল হাই অভিযোগ না করলেও ভিডিও দেখে পুলিশ অপরাধীদের সনাক্ত করেছেন। এছাড়াও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও তাদেরকে এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাবার উপযুক্ত ভাষা জানিনা। প্রতিবাদ জানাবার পাশাপাশি আমরা ইতিমধ্যে সনাক্তকৃত অভিযুক্তদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা রাজনৈতিক আক্রোশ কারণ যাই হোক এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এর বিরুদ্ধে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সদা সক্রিয় থাকতে হবে।
আমরা এও মনে করি যে, কুমিল্লার এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে, গত ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদি সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দলীয়করণের মাধ্যমে যেভাবে পদদলিত করেছে তার দায় পতিত সরকারের প্রধান ও তার সহযোগীদের। তাই বলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অসম্মান কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সকল রাজনৈতিক দল সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জোর দাবি জানাই। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দু’জনকে জামায়াতের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়, আমরা মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি ও সম্মান বিষয়ে জামায়াতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও তার বাস্তবায়নের অংগীকারের প্রকাশ্য ঘোষনা যেমন অপরিহার্য সেইসাথে ১৯৭১ সালে তাদের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা বাঞ্চনীয় । ”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, খুশি কবীর, সমন্বয়ক, নিজেরা করি, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি, ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
ড. ফিরদৌস আজীম, অধ্যাপক, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়,
জেড আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্টাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি, শিরীন পারভীন হক, সদস্য, নারীপক্ষ, ড. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এড. তবারক হোসাইন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, এড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট,
শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি, ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী প্রমুখ।
//এল//