সংগৃহীত ছবি
‘১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৩ গুণ, কিন্তু রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়েছে ৫৪ গুণ। ফলে মাটির স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেজন্য আসলে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কৃষিতে সার্টিফাইড কৃষক তৈরি করতে পারলে তরুণরা কৃষিতে এগিয়ে আসবে।’
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে অবস্থিত তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মিলনায়তনে দুই দিন ব্যাপী আয়োজিত ‘টেকসই কৃষি, মাটির স্বাস্থ্য, নিরাপদ খাদ্য এবং যুব ও নারী ক্ষমতায়নে জৈব সারে ভর্তুকি’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের এই বক্তব্য প্রদান করেন।
একশনএইড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) যৌথভাবে এই সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের মূলত: একটা আস্থার জায়গা দাঁড় করাতে হবে। রাসায়নিক কৃষির মাঝখানে এক টুকরো জমিতে জৈব কৃষি শুরু করলে হবে না, এর জন্য বড় আকারে কিছু সফলতার চিত্র দাঁড় করতে হবে। তাহলে আমরা সরকার এবং সাধারণ জনগণের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নজির স্থাপন করতে পারবো। তার জন্য জৈব কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. খালেকুজ্জামান আকন্দ চৌধুরী, বলেন, ‘রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হতে হতে মাটি বন্ধ্যাও হয়ে যেতে পারে যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং পরবর্তী প্রজন্মের উপর এটার প্রভাব মারাত্মক।’
টেকসই কৃষির জন্য যুব ও নারীদের ক্ষমতায়নে জৈব চাষে তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে এবং যুবদের জন্য বার্ষিক কৃষি অলিম্পিয়াড আয়োজনের ধারণাটি চমৎকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। জৈব চাষের জন্য উপলব্ধ ভর্তুকি, ব্যাংক ঋণ এবং অনুদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়, বিশেষ করে তরুণ কৃষকদের জন্য।’
সভাপ্রধানের বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘সবার আগে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে এবং কৃষককে সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি কৃষিকে শুধু ফসলে আটকে রাখলে হবে না, এটাকে সমন্বিতভাবে দেখতে হবে। ফসলের সাথে পোলট্রি, মাছ, গরু-ছাগল সবকিছুর সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরকে পলিসি ইনফ্লুয়েন্সেও কাজ করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি করপোরেট কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে কিন্তু কৃষককে ভর্তুকি দেই না-- এই ব্যাপারে আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে।’
দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ-এর বিষয় মাথায় রেখে যুগোপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন ও বর্জ্য পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আমরা সমবায়কে গুরুত্ব দেই না। কৃষক ফেডারেশনগুলোকে শক্তিশালী করা এবং তাদেরকে একটা লাভজনক জায়গায় নিতে হবে। কৃষক সার উৎপাদন করছে কিন্তু লাইসেন্স পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি সহজতর করতে হবে। তারজন্য লাইসেন্স প্রদান ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
সমাপনী অধিবেশনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. নাজিমউদ্দিন সুপারিশমালা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘কৃষির জন্য মাটি অত্যাবশ্যকীয় সম্পদ। সুতরাং মাটির স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, এতদিন আমরা গাছকে খাবার দিতাম কিন্তু এখন সময় এসেছে মাটিকে খাবার দেয়ার; মাটিকে খাবার দিলে গাছ খাবার পাবে।’
দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে সব মিলে ছয়টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনে মাটির স্বাস্থ্য ও স্থায়িত্বশীল কৃষি; স্থায়িত্বশীল কৃষি ব্যবস্থায় জৈব সারের ভূমিকা এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনে কৃষিতে যুব ও নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন; জৈব সারে ভর্তুকি প্রদানে ফ্রেমওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ জৈব কৃষি চর্চা বৃদ্ধির রোডম্যাপ বিষয়ক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সমাপনী অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণা পরিচালক ড. মুন্সি রাশিদ আহমেদ; মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো: শওকত ওসমানসহ প্রমুখ।
//এল//