সংগৃহীত ছবি
সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে পরিচছন্নতা কর্মী, দলিত, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য দূর করা যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে, অঞ্চলে অঞ্চলে পেশায় পেশায় বৈষম্যের প্রতি আঘাত হানতে হবে। এই জনগোষ্ঠীর অধিকার মর্যাদা নিশ্চিত করতে বৈষম্যগুলো দূর করার আহ্বান জানান বক্তারা ।
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক বিশেষ সম্মেলনে বক্তারা একথা বলেন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বিলস্ এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন, নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মুশতাক হোসেন, এবং দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনি রানী দাস।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছে। তার বাস্তব কোন উদ্যোগ বিগত চারমাসেও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, বৈষম্য কোথায় এবং কিভাবে চর্চা হচ্ছে তার একটি সার্বিক চিত্র এই সরকারের অনুসন্ধানের বিষয় হওয়া উচিত। এজন্যে তিনি একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি আরো বলেন, আজকের এই বিশেষ সম্মেলনে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথাই আলোচনা করা হবে।
মনি রানী দাস বলেন, দলিত জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের অধিকার আজও অর্জিত হয়নি। দলিত ও বঞ্চিতদের অধিকার সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বৈষম্য বিরোধী আইন অবিলম্বে পাশ করার আহব্বান জানান।
ড. মুশতাক হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। কাঠামোগত পরিবর্তন না হলে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে জুলাই-আগস্ট এ নিহত হওয়া শহীদদের রক্ত বৃথা হয়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সংস্কার ও ব্যাপক নীতিগত পরিবর্তন, ও প্রতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার মধ্য দিয়েই দেশের আপাময় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
এ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দেশের মানুষের করের টাকায় যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা নেই বললেই চলে। মানুষের মাঝে নাগরিক অধিকারবোধ তৈরী এবং দেশ পরিচালনায় জনগণের কি ভূমিকা হবে সে বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে এবং যে কোন বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। সংস্কারের একটি পূর্ণ ধারণা এবং বাস্তবায়নের একটি রোডম্যাপ ছাড়া শুধু নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করতে পারবে না। গণতন্ত্র সুরক্ষিত না হলে বৈষম্য দূর করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবিক অধিকারসমূহ অর্জন করা সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে আমরা কাজ করছি। দেশের যেকোন আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের বড় ধরনের আত্মত্যাগ থাকলেও তা একসময় হারিয়ে যায়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রম সংস্কার কমিশন আপনাদের সহযোগীতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রম সংস্কার কমিশন একটি সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরী করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে। এই প্রস্তাবনা বৈষম্য নিরোধে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না, যদি না পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর, প্রতিষ্ঠানিক ও অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষ তাদের আন্দোলন অব্যাহত না রাখে।
দিনব্যাপী চারটি বিষয়ের উপরে আলোচনা করা হয়। এই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আন্দোলনের কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের সমস্যা ও সমাধানের কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় দলিত, হরিজন ও চা-জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও বৈষম্য নিরসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ। আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) এর সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত, মৌলভীবাজার চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্ট এর সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস এর উপ-নির্বাহী পরিচালক শাহরিয়ার সাদাত।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চা জনগোষ্ঠীর মানুষের ভূমির অধিকার নেই, ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে বলতে হয় ল্যাট্রিন তৈরির কথা, ঘরে পানি পড়া বন্ধ করার কথা । মানুষ হিসেবে তাদের সম্মান করতে হবে। এই সমস্যা নিরসনে তাদের মতো করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবীদের বৈষম্য বঞ্চনা উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (কাপ) এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত সভাপতিত্ত্বে
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরাম এর আহবায়ক শ্রমিকনেতা আবুল হোসাইন, সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, অধুনা বাংলাদেশ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী ইমাম।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমস্যা ও বৈষম্য নিরসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাইপ্রু নেলী, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি’র সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ড. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো।
এবং ‘ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর ও ক্ষুদ্র উৎপাদকদের সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট এস.এম.এ সবুর। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম, রিসার্চ এনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিইব) এর পরিচালক সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামিউল আলম রাসু।
//এল//