ছবি সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মরদেহ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে মরদেহ। ২৩ ডিসেম্বর (সোমবার) মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তবে সময় এখনও নির্ধারিত না।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে হাইকোর্ট এবং সচিবালয়ে। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা বলেছেন, কর্মজীবনে হাসান ছিলেন একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। ন্যায়ের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল।
আজ সকালে দীর্ঘ ৫৫ বছরে আইন পেশার সমাপ্তি টেনে শেষবারের মতো সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসা হয় সিনিয়র আইনজীবী, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মরদেহ। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা বর্ষীয়ান এই আইনজীবীরা জানাজায় হাজির হন।
হাইকোর্টে সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ অনুষ্ঠিত হয় তার দ্বিতীয় জানাজা। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা ও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। এছাড়া সরকারের উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ আইনজীবীরাও অংশ নেন।
জানাজা শেষে তার কফিনে ফুলের শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিরা। এরপর শ্রদ্ধা জানানো হয় আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
এসময় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বলেন, হাসান আরিফ ছিলেন নিরহংকার আর সাদা মনের মানুষ।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, যাকে হারিয়েছি তিনি সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ওনাকে হারানোয় বারে (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে। যারা চিনতেন তারা ভালা বন্ধু এবং অভিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুকে হারিয়েছেন। এ রকম লোক এক জনের পর এক জন আমরা হারাচ্ছি, যেটা খালি হচ্ছে সেটাকে পূরণ করা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, হাসান আরিফ ছিলেন আইনের পণ্ডিত। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের জন্য তিনি নীরবে কাজ করে গেছেন।
সিনিয়র আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, হাসান আরিফের কাজ কর্ম নতুন আইনজীবীদের কাছে অনুকরণীয় হবার মতো। তার মৃত্যু আইন অঙ্গনে বিশাল একটি শূন্যতা তৈরি হবে।
হাসান আরিফ প্রতিভাবান একজন মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তিনি একজন বিশ্বাসযোগ্য সরল মানুষ ছিলেন। তার সততা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নি। আইন অঙ্গনে তার কর্মকাণ্ড রেফারেন্স হিসেবে থাকবে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের হাসান আরিফের দ্বিতীয় জানাজার শেষে বেলা ১২টার দিকে সিনিয়র আইনজীবী ও অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সচিবালয়ে। এতে অংশ নেন সচিবসহ কর্মকর্তারা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসময় বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে তিনি নিষ্ঠার সাথে নতুনভাবে দেশ গড়ার কাজ করছিলেন। তার চলে যাওয়া অভিজ্ঞতার একটা শূন্য জায়গা তৈরি হলো।
আগামী ২৩ তারিখ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে উপদেষ্টা হাসান আরিফের মরদেহ দাফন করা হবে।
জানাজায় স্মৃতিচারণ করেন এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট আশিক আল জলিল।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল রাজধানী একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাসান আরিফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন।
এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। একই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৪১ সালের ১০ জুলাই হাসান আরিফ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক এবং পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি সম্পন্ন করেন।
তিনি কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৬৭ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইউ