সংগৃহীত ছবি
‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও। আবার আমাদের দেখা হবে’ বলে একমাত্র ছেলেকে শেষবিদায় দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মা রাইসা সুলতানা।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে আসেন রাইসা সুলতানা। মুহতাসিমের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাইসা সুলতানা বলেন, কামরুল নামে মুহতাসিমের এক বন্ধু ভোরে ফোন করে জানায়, মুহতাসিম দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ছেলের মৃত্যুর খবর প্রথমে আমি বিশ্বাস করেনি।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে যায় মুহতাসিম। কথা ছিল ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। বাসায় না ফেরায় সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে ফোন দিই। ছেলে বলে পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে। রাতে হলে থাকবে, বাসায় ফিরবে না। ছেলের সঙ্গে কথা বলেই আমি ঘুমাতে যায়।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়া বলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তার ছেলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই ছিল মাসুদ মিয়া ও রাইসা সুলতানা দম্পতির সংসার। দুই সন্তানের পড়াশোনাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন তারা। ছেলে মুহতাসিম মাসুদ (২২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে পড়ে ঢাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে। তাদের দুজনকে নিয়েই গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন তারা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ৮টার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন বুয়েট শিক্ষার্থী মোহতাসিম মাসুদ, অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান। পরে তিন বন্ধু মিলে ৩০০ ফিট সড়কে ঘুরতে বের হন। সেখানে নীলা মার্কেটে তারা রাতের খাবার খান। পরে বাসায় ফেরার সময় নীলা মার্কেটের অদূরে একটি পুলিশ চেকপোস্টে তাদের থামানো হয়। ভোররাত আনুমানিক ৩টার দিকে পুলিশ চেকপোস্টে দাঁড়ানো অবস্থায় বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেটকার সেই চেকপোস্ট অতিক্রম করে মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মোহতাসিম। তার অপর দুই বন্ধুকে পথচারীরা তাদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর অমিতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং মেহেদীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার মুবিন আল মামুন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে এবং তিনিই প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন। প্রাইভেট কারটির রেজিস্ট্রেশনও সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার নামে। ঘটনার পর প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে এক ক্যান বিয়ার ও একটি খালি মদের বোতল পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহত মাসুদের পিতা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মাসুদ মিয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মুহতাসিমের লাশ নেওয়া হয় গ্রিনরোডের ওই বাসায়। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও মুহতাসিমের সহপাঠীরা।
//এল//