সংগৃহীত ছবি
ভেজাল মুক্ত খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) নাগরিক উদ্যোগ ও মহাপ্রজ্ঞা এডুকেশন ট্রাস্টের আয়োজনে রাজধানীর মিরপুর ১৩ বনফুল আদিবাসী গ্রীমহার্ট কলেজ প্রাংগনে আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা ২০২৪ এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
বেলুন উড়িয়ে আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা ২০২৪ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মৎস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ভেজাল মুক্ত খাদ্য খাওয়া খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে মানুষের ক্যান্সারসহ যে জটিল রোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে খাদ্য থেকেই প্রধান লক্ষ্য করা যায়। একজন মানুষ সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকতে বিশুদ্ধ খাদ্য খুবই প্রয়োজন। আমাদের দেশে যে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্যতম।
তিনি আরো বলেন, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে প্রায় ৮২ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।আর দেশে যে পরিমাণ শাক-সবজি উৎপাদন হয় তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশি বিশুদ্ধ শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। তাই আমরা যারা বৃহৎ জনগোষ্ঠী আছি আমাদের দায়িত্ব পাহাড়ি মানুষের খাদ্য, সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। কাপ্তাই হ্রদের মাছ, পাহাড়ি মুরগি রক্ষা করা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহাপ্রজ্ঞা এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দিলীপ বড়ুয়া এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।
মেলায় পসার সাজিয়ে বসেছিলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নানা সম্প্রদায়ের উদ্যোক্তারা । এই মেলায় ২১ টি স্টল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি স্টল ছিলো নাগরিক উদ্যোগের। এই সংস্থা থেকে আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায়ের উপর প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থগুলো প্রদর্শিত হয়েছে । এই মেলা দুদিন ব্যাপী চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় খাবারের সম্ভার নিয়ে সাজানো হয়েছে আঠারটি স্টল। ডাবলি দিয়ে পাহাড়ি বিরিয়ানি, মুরগি সিদ্ধ করে ভাজি, মুলা কেটে সংরক্ষণ করা৷ ফুচকার ডাবলি, পাচন, বড়া পিঠা, শুকুরের মাংস দিয়ে নানা পদ - শুকর পিঠা, শুকর খিচুড়ি, শুকর তরকারি, শামুক পিঠা, ঝিনুক তরকারি, বন আলু ভাজি, বিন্নি পিঠা আরো কত কি পসার সাজিয়ে বসেছিলেন আদিবাসী বিক্রেতারা। একটি স্টলে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এর নানাজাতের ফলমূল, শাকসবজি দিয়ে পসার সাজানো হয়েছে ।
স্টলগুলো পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও শস্যের মধ্যে যে বৈচিত্র দেখতে পাচ্ছি এটা খুবই সমৃদ্ধ। শামুক, ঝিনুক, মুরগির মাংসের নানা রকম রান্না আমরা যা জানি তা থেকেও এখানে ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকা বাসীকে অনুরোধ করছি, এই মেলা শিক্ষামূলক। তরুণ প্রজন্মের এখানে আসা দরকার। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।
তিনি আরো বলেন, বাজারে ভেজাল খাদ্য বিক্রি বন্ধ করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আজকে এই আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলায় আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আর্থসামাজিক ভাবে এখনো পিছিয়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকায় পড়াশোনা করতে পারে, তাই আদিবাসীদের কথা ভেবে ঢাকায় আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজর মাধ্যমে আদিবাসীদের সাথে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সেতুবন্ধন রচিত হয়েছে এবং সর্বশেষ সকলের সমন্বিত পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আদিবাসীদের খাদ্যভাসের সাথে সবাই পরিচিত লাভ করুক এই আশা ব্যক্ত করেন। এই কলেজটিকে সরকারিকরণের প্রস্তাব রাখেন তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বাঙালিসহ ৫৪টির বেশি জনগোষ্ঠী বসবাসরত আছে। তার মধ্যে বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য আদিবাসী জাতিসমূহের যে সংস্কৃতি, ভাষা,খাদ্যভাস ও বিশেষ কৃষি সেগুলো রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পৃথিবীতে ৭০ কোটি মানুষ খাদ্যের অভাবে থাকে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় হচ্ছে যা উন্নত বিশ্বে তেমন লক্ষ্য করা যায় না। আজকে যে পরিমাণ খাদ্য ও শস্য নষ্ট করা হচ্ছে তা কখনো কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, খাদ্য অপচয় না করে যারা খাদ্য পাচ্ছে না তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠী বৈচিত্র্যময় খাবার খায়, রঙ্গিন পোশাক পরে। আদিবাসীদের সংগে বাঙ্গালিদের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দূরত্ব ঘোচাতে এ ধরনের উদ্যোগ আরো নিতে হবে।
ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া বলেন,বর্তমানে খাদ্যের মধ্যে নানান ভাবে বিষ মেশানো হচ্ছে। পাহাড়ি খাদ্য হচ্ছে ভেজাল মুক্ত খাদ্য।
তিনি আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলার সফলতা কামনা করেন এবং এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক এক সম্পর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। মেলায় পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় খাবার ও শস্যের স্টলগুলোর মধ্যে সাত নম্বর স্টলের তত্বাবধানে ছিলেন পারমি চাকমা। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এর শাকসবজি, ফলমূল, আখ, আনারস, জাম্বুরা, শসা, বেগুন, এচোর, ফাইতা বেগুন, ছোট বেগুন, গুমুর সিমি (শীতকালীন শিম), রাজেলা, কচু, নানা ধরনের আলু, হুয়িং আলু, লাউ কত রকমের সবজি এনেছে।
পারমি চাকমার মতে, এই শাকসবজি অগানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়। এতে কোনে ভেজাল নেই।
স্টল নং ৮ এর খাবারের দোকানের সামনে প্রচন্ড ভিড়। হিতৈষী খীসা চাকমাসহ দু- তিনজন ক্রেতাদের অডার নিচ্ছিলেন। এখানে বিন্নি চাল, নারিকেল আর গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা, ব্যাম্বু ফিশের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।
হিতৈষী খীসা জানালেন, রোজেলা ড্রাই দিয়ে তৈরি চায়ে প্রচুর আয়রন আছে। যা আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
//এল//