ফাইল ছবি
রাহাত খান, বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, দেশের সাহিত্যে ও সাংবাদিকতায় এক অবিস্মরণীয় নাম। তার লেখনীতে ফুটে ওঠা জীবনের বাস্তব রূপ এবং সমাজের অন্তর্নিহিত জটিলতাগুলো তাকে পাঠক এবং সাহিত্যবোদ্ধাদের মনে চিরস্থায়ী আসন দিয়েছে।
জীবনী ও কর্মজীবন
রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি সাংবাদিকতাকে বেছে নেন এবং দেশের প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক-এ দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়েই পাঠকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
সাহিত্যকর্ম
রাহাত খানের সাহিত্যজীবন ছিল বহুমুখী। তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে অবদান রেখেছেন। তার রচনাগুলোর মধ্যে মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক জীবন এবং তাদের সংকটময় পরিস্থিতি গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধান সাহিত্যকর্ম:
উপন্যাস:
* হে অনন্ত: আমাদের কবি
* ছায়াদীর্ঘ
* স্মৃতিময়ী শহর
গল্পগ্রন্থ:
* বাংলাদেশের গল্প
* মধ্যরাতের অশ্বারোহী
* তার লেখা কাহিনীগুলোতে ব্যক্তিগত জীবন, রাজনীতি, প্রেম এবং বেদনাবিধুর সমাজচিত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে।
সাংবাদিকতায় অবদান
দৈনিক ইত্তেফাকে তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা তাকে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয়। তিনি সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং সাহসী কলামগুলো তাকে সাংবাদিক মহলে বিশেষ স্থান এনে দেয়।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
রাহাত খান তার সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
* একুশে পদক
* বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার
ব্যক্তিজীবন ও প্রস্থান
রাহাত খান ছিলেন এক সৃজনশীল ও প্রগতিশীল মানসিকতার মানুষ। ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রস্থান বাংলা সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
উপসংহার
রাহাত খান শুধু একজন সাহিত্যিক বা সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমকালীন সমাজের এক শক্তিশালী কণ্ঠ। তার লেখনীতে জীবনের প্রতিচ্ছবি, সমাজের জটিলতা এবং মানুষের আবেগগুলো চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। তার অবদান বাংলা সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার ইতিহাসে চিরদিন অমলিন থাকবে।
ইউ