সংগৃহীত ছবি
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, বিশেষ মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির করা হলে আগামী দিনের বাংলাদেশ গঠনে তারাও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।
মঙ্গলবার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ৩৩তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন ।
আলোচনা সভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ মহিউদ্দিন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নার্গিস খানম। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে সমৃদ্ধিশীল সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোই বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য। সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারলে এই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সমাজ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন,এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণের সুরক্ষা ও অধিকার ব্যস্তবায়নের জন্য "প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দরিদ্রতা ও সমস্যার কথা বিবেচনা করে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা-উপবৃত্তি, আর্থিক অনুদান, শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চালু রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবা এবং সহায়ক উপকরণ প্রদানের জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীনে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে ৪৫টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস সেবা, অটিজম রিসোর্স সেন্টার, কর্মজীবী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল, পিতৃ-মাতৃহীন প্রতিবন্ধী শিশু নিবাস, ৭৪টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, ১২টি স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সাভারে ১২.০১ একর জমির উপর ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি দেশের সকল প্রতিবন্ধী ভাই-বোন এবং এ সংগঠনের প্রতিনিধিদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দন জানান। শহিদ ছাত্র-জনতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এ আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে তাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের সুস্থ্যতা কামনা করেন। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-জনতা নতুন করে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন, তাদের এ মহান ত্যাগকে বিনম্রচিত্তে স্মরণ করেন।
এ বছর জাতিসংঘ কর্তৃক দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ' "অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ, বিকশিত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে প্রতিবন্ধী জনগণ"।
এ প্রতিপাদ্যটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সমাজসেবা অধিদফতরসহ অন্যান্য দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে । পরে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ অবদানে সফল ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে নগদ সহায়তা ও ক্রেস্ট প্রদান করেন।
দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ৩ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হবে ।
বিকেলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে মাননীয় উপদেষ্টার পিতা মরহুম খান সারোয়ার মুরশিদ এর সম্মানে একটি শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমার পিতা একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন যেমন, তেমনি তিনি একজন প্রশাসক হিসেবেও ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন।
//এল//