সংগৃহীত ছবি
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও হোস্ট কমিউনিটির নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়নে স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ইউএনএফপিএ এবং সুইজারল্যান্ড উদ্যোগ নিয়েছে।
সোমবার ‘রাইজিং টুগেদার’ শিরোনামে সুইজারল্যান্ডের সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরকালে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ মাসাকি ওয়াতাবে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং হোস্ট কমিউনিটির কিশোর-কিশোরী, তরুণ এবং নারীদের সহায়তার জন্য সুইজারল্যান্ড ও ইউএনএফপিএ এর মধ্যে ২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়ন শুধুমাত্র নৈতিকভাবে বাধ্যতামূলকই নয় বরং এটি তাদের মর্যাদা এবং সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণের প্রতি এক ধরণের প্রতিশ্রুতিও। রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং হোস্ট সম্প্রদায় উভয়ই এই দীর্ঘ সুরক্ষা সংকট মোকাবেলা করছে, তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
নারী ও তরুণদের উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়াই হল রাইজিং টুগেদার’ উদ্যোগটির মুখ্য উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসের অস্থায়ী চার্জ দ্য আফেয়ারস করিন হেনচোজ পিগনি বলেন, এই অংশীদারিত্ব নারীদের এবং মেয়েদের অধিকার উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
তিনি বলেন, "জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ, শিক্ষামূলক সেশন এবং সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার মাধ্যমে, এই উদ্যোগ নারী এবং কিশোরীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম করবে।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা দিন দিন জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে, মিয়ানমারে সহিংসতা বৃদ্ধি এবং মানবিক সহায়তার তহবিল সংকুচিত হওয়ায় নারী, কিশোরী, যুবক এবং অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীর সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে তা তীব্র হয়ে উঠেছে। শরণার্থীর প্রায় ৫১ শতাংশ নারী ও কন্যা , ৩৪ শতাংশ কিশোরী ও যুবকের প্রয়োজনের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
এই সঙ্কট নারী এবং যুবকদের জন্য একাধিক বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। যেমন জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা , বাল্যবিবাহ, কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ, অপহরণ, মানবপাচার ও শ্রম শোষণের শিকার হওয়ার মত সমস্যা। রোহিঙ্গা সমাজে, প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে একজনের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়, যা কক্সবাজারের স্থানীয় সমাজে প্রতি ৩ জনে ১ জন বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। পরস্পর সম্পর্কিত এবং জটিল এসব সমস্যা সমাধানে কেবল তাত্ক্ষণিক সহায়তাই নয়, বরং একই সাথে এসব সমস্যার মূল কারণগুলো সমাধান করার জন্য একটি পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।
প্রায় ১ লাখ ব্যক্তিকে লক্ষ্য মাত্রা করে এই উদ্যোগটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় সমাজের মোট ৬৪ হাজার নারী ও কিশোরীকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সেবা, রেফারেল এবং জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। এছাড়াও ৩৩ হাজার ১০০ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ অবৈতনিক শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং ইতিবাচক যুব উন্নয়ন এর উপর গৃহিত উদ্যোগসমূহ থেকে উপকৃত হবে। এসব কার্যক্রম রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় সমাজের ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রোগ্রামটি জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার, ইতিবাচক যুব উন্নয়ন ও নেতৃত্ব, এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে পরিচালিত হবে।
‘সংকটময় এই মুহূর্তে, সুইজারল্যান্ডের সময়মত এবং ধারাবাহিক সহায়তার জন্য আমরা -র জন্য কৃতজ্ঞ,’বলেছেন মাসাকি ওয়াতাবে।
//এল//