ছবি সংগৃহীত
বাংলা কাব্যসাহিত্যে এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনের আশা-আকাক্সক্ষার রূপকার, অসংখ্য ঊপন্যাস, গল্প-কবিতা, গান ও গীতিনাট্য’র স্রষ্টা কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি তিরিশ দশকের মাটি ও মানুষের কবি। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতাকে প্রতিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করে লিখেছেন।
‘এই বীভৎস হানাহানি আর-
এই মৃত্যুকে স্বীকার করিনি কভু...’।
একারণেই তিনি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে ভালোবাসা আর গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণীয়।
কবি আবদুল হাই মাশরেকী ১৯০৯ সালের ১ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের কাঁকনহাটি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন জমিদারবিরোধী আন্দোলনের তেজোদ্দীপ্ত নায়ক ওসমান গণি সরকার ও মাতা গৃহিনী রহিমা খাতুন।
শৈশব থেকেই গান ও কবিতা রচনা করতেন। কখনো কখনো বাড়ির সামনে কাঁচামাটিয়া নদীর বুকে ডিঙি ভাসিয়ে দিতেন।
কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ‘আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই আল্লাহ...’, ‘আমায় এতো রাতে ক্যানে ডাক দিলি’, ‘মাঝি বাইয়া যাও রে...’, ‘আমার কাঙ্খের কলসি...’, ‘প্রাণও সখি রে বাবলা বনের ধারে ধারে বাঁশি বাজায় কে...’, ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে...’ অমর গানগুলি আজও বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আজও দেশব্যাপী এইসব চিরায়ত সংগীত চর্চিত হচ্ছে গণমানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে।
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আধুনিককাব্য- ‘কিছু রেখে যেতে চাই’, ‘হে আমার দেশ’; অন্যান্য কাব্য- ‘দেশ দেশ নন্দিতা’, ‘মাঠের কবিতা মাঠের গান’, ‘কাল নিরবধি’; গীতিনাট্য ও কাব্য- ‘ভাটিয়ালী’; পুঁথিকাব্য- ‘হযরত আবুবকর (রা.)’; খণ্ডকাব্য- ‘অভিশপ্তের বাণী’; পালাগান- ‘রাখালবন্ধু’, ‘জরিনা সুন্দরী’; পল্লী-গীতিকা- ‘ডাল ধরিয়া নুয়াইয়া কন্যা’; জারি- ‘দুখু মিয়ার জারী’, ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার জারী’; ছোটদের কাব্য- ‘হুতুম-ভুতুম রাত্রি’; গল্প- ‘কুলসুম’, ‘বাউল মনের নকশা’, ‘মানুষ ও লাশ’, ‘নদীভাঙে’; নাটক- ‘সাঁকো’, ‘নতুন গাঁয়ের কাহিনী’; অনুবাদ- ‘আকাশ কেন নীল’ প্রভৃতি।
আজ ১ এপ্রিল ২০২৪ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকী। কবির জন্মদিন উপলক্ষে ‘কবি আবদুল হাই মাশরেকী পরিষদ’ এর উদ্যোগে ঈশ্বরগঞ্জে কবির মাজার জিয়ারত ও দোয়া’র আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭ এপ্রিল রাজধানীর নয়া পল্টনে মাসিক জনপ্রশাসন কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
মহান এই কবি ১৯৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জের নিজবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
ইউ