
ছবি সংগৃহীত
বাংলা কবিতার পরিসরে নতুন এক স্বর নিয়ে হাজির হয়েছেন কবি রোকসানা পারভীন সাথী। তার সাম্প্রতিক কবিতা ‘কুমারী জলে বাল্যসুখে’ একাধারে শৈশবস্মৃতি, প্রেমের নিস্পাপ অভিব্যক্তি এবং বাংলার প্রাকৃতিক ও লোকজ সৌন্দর্যকে এক মায়াবী ছন্দে বেঁধে রেখেছে।
এই কবিতায় কবি আমাদের নিয়ে যান এক কল্পলোকের ভেতরে—যেখানে পদ্মদিঘি, লোবান মাখা রাত, শিউলি-বিকেল, চালতাফুল, ডাহুক, গোমতী-ধলেশ্বরী, বেহুলার ভেলা, কদমগুচ্ছ এমন অসংখ্য উপাদান জুড়ে গড়ে ওঠে এক স্বপ্নালু বাল্যগ্রাম। কবির ভাষা সরল, কিন্তু প্রতীক ব্যবহার দারুণ সংবেদনশীল। প্রতিটি স্তবকে ছড়িয়ে রয়েছে গভীর আবেগ, চিত্রকল্প, এবং স্মৃতিমেদুর রোমান্স।
কবিতাটির বিশেষত্ব হলো, এটি কেবল প্রেম বা প্রকৃতি নয়, বরং বাংলা লোকজ ঐতিহ্য, মানবিক অনুভব, এবং সময়ের রূপান্তরকে একত্রে তুলে ধরেছে। রেললাইন, গুমরে থাকা অভিমান, মরচে ধরা অতীত কিংবা বৈশাখী ধোয়ানিতে তা ধুয়ে নেয়া- এসব উপমা আমাদের চেনা অনুভূতিগুলোকে নতুন করে চেনায়।
‘এক জনমে নয়, জনমে জনমে চাইগো শুধুই তোকে’- এই চরণে প্রেমের যে চিরায়ত আকুলতা ধরা পড়ে, তা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অন্যদিকে, ‘ভবঘুরে শব্দ কবিতা বাঁধে ঘর সপ্তসুরে’ লাইনটিতে ধরা পড়ে কবির শিল্পীসত্তা ও শব্দের প্রতি দায়বদ্ধতা।
পাঠকদের জন্য কবিতাটি তুলে ধরা হলো:
কুমারী জলে বাল্যসুখে
কবি: রোকসানা পারভীন সাথী
বয়সটা হয়তো ষোল নয়তো কুড়ি
কুমারী জলে বাল্য সুখে কুড়াবো ধুই নুড়ি
পদ্মদিঘিতে ভাসবো দু'জনে লোবান মাখা রাতে
সোনালু জারুল পারুলের ভেজা দুটি হাতে।
খইরঙা হাঁসের ডাকাবুকো মুখে তরুণ সকালে
ফসলের ওমে রইবো বিভোর শিউলিস্নাত বিকালে
তিতির দুপুরে ধুয়ে নেব ঝুটা টুটা সব অভিমান
জাফরানি সৌরভে গাইবো দুজনে শাপলা শালুক গান।
চালতাফুলের ঘ্রাণে জেগে উঠবে ডাহুকির প্রান্তর
রূপালি আলোর মৌ মৌ সুখে কাঁপবে দুটি অন্তর
রেললাইন বেয়ে হেঁটে যাব মাুসাফির আলপথে
গোমতী ধলেশ্বরীর লাল আঁচলের দ্বৈরথে।
ময়ূরপঙ্খি নাঁয়ে নয়তো বেহুলা-লখিন্দরের ভেলায়
মাতবো দু'জনে বাল্যগাঁয়ে হাডুডু কানামাছি খেলায়
বৃষ্টিকাতর কদমগুচ্ছ নিয়ে শুধাবে নির্বাক চোখে
এক জনমে নয়, জনমে জনমে চাইগো শুধুই তোকে।
বকুল বিছানো মায়াকাননের দিপীত কমলবনে
যক্ষপ্রিয়ার বিরহ ঘুচাবো সুরভিত মৌবনে
বৃষ্টির ফোঁটায় ঝরবে কথা এলোমেলো একেবেঁকে
মরচে পরা অতীত ধুয়ে নেব দুরন্ত বৈশাখে ।
ভবঘুরে শব্দ কবিতা বাঁধে ঘর সপ্তসুরে
প্রজাপতি ডানায় রঙধনু হিয়ায় ছুটবো অচিনপুরে
শ্যামলে সুনীলে ঠাঁই নেব পালতোলা এক ঘরে
সোনা রোদ্দুর ডিগবাজি খাবে বাকবাকুম সুরে।
ভাসবো জলগানে নুপূর কলতানে মধুমতির গাঙচিলে
ডুববো প্রিয়তমা তোর বাঁ গালের ওই তিলে
দেনাজর্জর এলাচিপুরের শালিখ দোয়েল ঘোরে
আদম-হাওয়ার স্রোতে ভেসে যাব গন্ধম সুবাস ভোরে।
ইউ