সংগৃহীত ছবি
আহসান হাবীবের অভিযাত্রা নিঃসঙ্গ এবং নিঃশঙ্ক। তিনি তাঁর কবিতা ও সামগ্রিক সাহিত্যকর্মে আপামর মানুষের যাপন, সংগ্রাম, সংকট নানা রীতিতে ভাস্বর করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রখ্যাত কবি ও সম্পাদক আহসান হাবীবের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনারে আলোচকরা একথা বলেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাঃ নায়েব আলী। আহসান হাবীবের কবিতা : একটি উত্তর—ঔপনিবেশিক পাঠ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহানা মাহবুব।
আলোচনায় নেন কবি শামসেত তাবরেজী ও কবি তুষার দাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। আহসান হাবীবের কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী ইকবাল বাহার চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কাজী রুমানা আহমেদ সোমা।
মোহাঃ নায়েব আলী বলেন, আহসান হাবীব কবি হিসেবে যেমন ছিলেন শক্তিশালী তেমনি সম্পাদক হিসেবে ছিলেন সৎ ও সাহসী। তিনি তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যসাধনার পরিচর্যাকারী কিংবদন্তি সম্পাদক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ড. সোহানা মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের চল্লিশের দশকের শক্তিমান কবি আহসান হাবীব। কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তাঁকে একটি নয়, দুটো উপনিবেশী শক্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঔপনিবেশক শক্তির আগ্রাসন সাধারণত ব্যক্তিচেতনায় ভয়াবহ ক্ষতের জন্ম দেয়। একজন সংবেদনশীল কবি হিসেবে আহসান হাবীবকেও যে নিশ্চিতভাবে সেই ক্ষত বহন করতে হয়েছে, তাঁর কবিতায় গভীরভাবে এর প্রকাশ পাওয়া যায়। কবিতায় তিনি এমন এক অবিনাশী অস্ত্র প্রত্যাশা করেছেন, যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে ঘৃণা বিদ্বেষ অহংকারকে বার বার পরাজিত হবে, যে অস্ত্র আধিপত্যবাদের কর্তৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। কবি মনে করেন সেই অবিনাশী অস্ত্রের নাম ‘ভালোবাসা’। কবির এই আকাঙ্ক্ষায় উত্তর—উপনিবেশবাদী প্রতিরোধের বয়ান নির্মিত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নয়া উপনিবেশায়নের এই নতুন আগ্রাসনের যুগে আহসান হাবীবের কবিতায় নির্মিত হাজার বছরের আবহমান বাংলার ঋদ্ধ ঐতিহ্য—সংস্কৃতির জগৎ উপনিবেশিত জাতিগোষ্ঠীর মনোজগতে একটি বিপরীত বয়ান সৃজন করবে বলেই আশা করা যায়।
আলোচকদ্বয় বলেন, আহসান হাবীব এক দূরগামী কবি। তিনি তাঁর সময়ের মধ্যে তীব্রভাবে ছিলেন, সময়ের স্বর তাঁর কবিতায় বিশুদ্ধ ভাষা পেয়েছে। আবার নিজ সময়কে ছাপিয়ে তিনি সময়াতীত সুদূরের স্বপ্ন বুনন করেছেন তাঁর কবিতায়।
তাঁরা বলেন, আহসান হাবীব সম্পর্কে আমাদের সুদীর্ঘ নীরবতা ভেঙে বাংলা একাডেমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি জরুরি কাজ সম্পাদন করেছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আহসান হাবীবের জীবন ও কবিতা ঘিরে ঔপনিবেশিক সময় ছায়া ফেলেছে ভীষণভাবে। তাঁর কবিতার উত্তর—ঔপনিবেশিক পাঠ তাৎপর্যপূর্ণ তবে জাতীয়তাবাদী সংকীর্ণ সীমায় তাকে পাঠ করা কোনও কাজের কথা নয়। তিনি বলেন, আহসান হাবীব বাংলাদেশে সবসময়ই একজন পঠিত ও আলোচিত কবি। চল্লিশের দশকের কবিতাচর্চায় আহসান হাবীব সমন্বয়ী মানবতাবাদী ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, যে সমন্বয়ী মানবতাবাদের প্রাসঙ্গিকতা ফুরোবার নয়।
//এল//