ছবি: উইমেনআই২৪
মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যকে সীমাবদ্ধ ব্যাখ্যায় আবদ্ধ করা যাবে না। কারণ এটি অসীমের ইঙ্গিতবহ। এই নাট্য মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে আছে, আবার নির্দিষ্ট সময়কে ছাপিয়ে তা চিরকালীন প্রতিরোধের শিল্পস্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, কবর নাটকে নানাদিক থেকে পাঠ করার সুযোগ রয়েছে। জীবনের বিপরীতে যে লাশের বাস্তবতা আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে অভিনীত হয়ে চলেছে; সে বাস্তবতা ভাঙতে হলে মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যকে পাঠ্য ও অভিনয়বস্তুর বাইরে এর বহুর্থ ব্যঞ্জনায় অবলোকন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগেরপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মাহবুবা রহমান।
সাহিত্য-শাস্ত্রবাদী ও জাতীয়তাবাদী নাট্যসমালোচনার অধিপতিশীল ধারার বিপরীতে মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যের অন্য পাঠ: স্মৃতির রাজনীতি ও রাজনৈতিক অজ্ঞান মনের বিবিধ রূপরেখা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.শাহমান মৈশান। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক সুমন রহমান ও অধ্যাপক ফারহানা আখতার।
ড. সরকার আমিন বলেন, মুনীর চৌধুরী তাঁর জন্মের প্রায় শতবর্ষ পেরিয়ে আজও আমাদের কাছে সমান প্রাসঙ্গিক। ২০২৪-এ ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে তাঁর রচিত কবর নাট্যের নানাচরিত্র, ঘটনাপ্রবাহ ও সংলাপের অনন্য মিল আবিষ্কার করা যায়,যা সৃষ্টিশীল মানুষের দূরকল্পনাকে প্রতীয়মান করে।
অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান বলেন, বাংলাদেশে মুনীর চৌধুরীর কবর নাট্যের প্রতাপশালী সমালোচনামূলক যে ডিসকোর্স গড়ে উঠেছে সেখানকার সাহিত্যবাদী সমালোচনা থেকে এই নাট্যের পরিপূর্ণ উপলব্ধি ঘটে না। কারণ নাট্য যে লিখিত সাহিত্যের একটি বিশেষ রূপ হয়েও তা অভিনীতব্য কলা সেটা আমলে নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, একটি সাহিত্য কেবল এর অতীতের মানদন্ড বিবেচ্য নয়। সৃষ্টিশীল যে সকল সাহিত্যকর্ম কালজয়ী, সেসব কাজ সর্বদা প্রতীক আকারে ধারণ করে সময়ের তিন মাত্রা : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। কবর যেমন অতীতের স্মৃতি, তেমনই স্মৃতির রাজনীতি হিসেবে শুধু নয়, লাশের স্মৃতি স্বয়ং বর্তমানের প্রতিরোধের মর্ম দিয়ে সৃজিত জীবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে। কবর অন্যদিকে কেবল পাকিস্তানের কবর রচনার ভবিষ্যৎবাণী করেনি শুধু, বাংলাদেশের জন্মেরও সাক্ষ্য দেয়। শুধু তাই নয়, সময়োত্তীর্ণ সৃষ্টিকর্ম হিসেবে এই নাট্য ভবিষ্যতের গণ-উত্থানের সম্ভাবনাও ঘোষণা করে।
আলোচকদ্বয় বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কবর নাট্যের একমাত্রিক পাঠ বিপজ্জনক এবং যথাবিচারপূর্ণ নয়, যদিও আমাদের জাতীয়তবাদী ও সাহিত্যশাস্ত্রবাদী পাঠ-পরিসরে এটি নিয়মিত ঘটে চলেছে। মুনীর চৌধুরীর এই রচনাসহ তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন পাঠের দাবি রাখে, কারণ নির্দিষ্ট সময় এবং প্রপঞ্চকে ধারণ করেও তিনি সৃষ্টিশীলতার নানামাত্রিক ও চিরায়ত জ্যোতি বহন করে চলেন।