কানাইলাল জানা,ফাইল ছবি
ব্রহ্মপুরে আমাদের নতুন বাড়ি যখন তৈরি হয় জায়গাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা তাই বাড়ির নাম 'নির্জনে'। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত সিঁড়ি লাগোয়া দেয়ালে টাঙানো হয় প্রিয় চিত্রশিল্পীদের ছবি, ভেতরের দেয়ালে বাণীসহ মনীষীদের অল্প কিছু রেখাচিত্র, বসার ঘরটি যতটা সম্ভব বড় করে রাখা হল তাকে তাকে পছন্দের বই। বারান্দার কোণে কোণে ফুল গাছের টব।
সারাক্ষণ ফাঁকা ঘরে খেলে বেড়ায় সোহাগী বাতাস। গেটের দুপাশে থাকল আগের বাসার দুটো মোটা খ্রিসমাস ট্রি। যাদের গুঁড়ি দুটোকে দোতলা থেকে মনে হয়' ঈশ্বরের পা'। লাগোয়া বাগানে দেখি লবঙ্গগাছ ছোট এলাচকে শেখাচ্ছে স্বরবর্ণ, বাতাবিলেবু করমচাকে পড়াচ্ছে ধারাপাত, ভুট্টাখেত কচুবনকে সড়গড় করাচ্ছে স্বরলিপি যখন লেবু নাসপাতিরা মেঘের ওপর মেঘ সাজাতে ব্যস্ত । এই পরিবেশেও মনে হল ঘরে যেন কিসের অভাব!
হঠাৎ স্মৃতিতে জেগে উঠল গানের কলি: 'ও মন জান না, তোমার ঘরে বসত করে ক'জনা?' তারপর দেখা দিল পেছনের চাতালে সার বেঁধে কালো পিঁপড়ের দল, সুঁড় উঁচিয়ে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছে, দক্ষিণের খোলা বারান্দায় এসে বসছে চড়ুই, টুনটুনি হলদে শালিক, ফিঙে, লেজ ঝোলা । পাড়ার রূপসী বেড়াল পড়ার টেবিলের নিচে জন্ম দিল 'পুটু' 'ঘুটু' দুই ভাই-র। ছাদের ঘরে জয়ী-র কাছে পেলাম 'গুল্লু'- 'পুল্লু'কে। কিছু পরে পুল্লুর ছেলে মেয়ে: 'হাপুস' -'হুপুস'। সর্বদা খুনসুটিতে মাতোয়ারা মার্জার বাহিনী। সাদা দেয়ালে মহানন্দে ঘুরে বেড়ায় 'যদু' ও 'মধু' নামের এক জোড়া টিকটিকি, রান্নাঘরে 'ঘনা' ও 'মনা' দুটি আরশোলা। আর আছে বইয়ের তাকের একেবারে ওপরে 'রুখুসুখু' ঘুঘুর বাসা। বাসা বাঁধা থেকে ডিম পেড়ে বাচ্চা বড় করা তার কর্মযজ্ঞ দেখার মতো। বাচ্চা নিয়ে চলে গেলে পাঠিয়ে দেয় আর একজনকে মা হতে। প্রাণচঞ্চল বাড়িটিকে তখন মনে হয় অনেকটাই সম্পূর্ণ এক 'সাজানো ঘর'। সকলকে ছেড়ে বাইরে কোথাও দুদন্ড যে থাকব এমনটা ভাবতেই পারি না এখন...
//এল//