
ফাইল ছবি
মস্তিষ্ক মানব শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির একটি, যা আমাদের চিন্তা, অনুভুতি, স্মৃতি এবং সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। একে কেন্দ্র করে আমাদের মানসিক অবস্থা, ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা নির্ধারিত হয়। তাই মস্তিষ্কের সুস্থতা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতারও একটি মৌলিক উপাদান। বর্তমান যুগে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও উঠে এসেছে, যেমন অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ ইত্যাদি। এইসব মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পারফরম্যান্স ও সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পথচলতি জীবন ও কাজের চাপ, পরিবেশগত দূষণ, ঘুমের অভাব, সামাজিক সম্পর্কের চাপ—এইসব মস্তিষ্কের সঠিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, সামাজিক যোগাযোগ এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, নতুন কিছু শিখে বা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে মস্তিষ্ককে সচল রাখা মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকেও ধীর করে দেয়।
তা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো...
সুষম খাদ্যাভ্যাস
মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মাছ, বাদাম, শাকসবজি ও ডিমে পাওয়া যায়, তা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারও মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং নতুন স্নায়ু কোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মস্তিষ্ক শরীরের অন্যান্য অংশের মতো বিশ্রাম নেয়, মেমোরি প্রসেসিং হয় এবং মনোযোগের ক্ষমতা বাড়ে। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিরাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিয়মিত ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে। এটি মস্তিষ্কের স্নায়বিক সঞ্চালন উন্নত করে এবং ন্যাচারাল স্ট্রেস রিলিভার হিসেবে কাজ করে।
সামাজিক সংযোগ
সামাজিক যোগাযোগ মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার এবং সহকর্মীদের সাথে সময় কাটানো মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি এক ধরনের মানসিক উত্তেজনা তৈরি করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
নতুন কিছু শিখা
মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখতে নতুন কিছু শিখা গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ভাষা শেখা, যন্ত্র বাজানো বা নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষের সংযোগ বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে।
সঠিক পানীয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পানি মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ক্যাফেইন বা চা-ও মস্তিষ্কের সতর্কতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত সেবন পরিহার করতে হবে।
মস্তিষ্কের বিশ্রাম
দিনের মধ্যে কয়েকবার বিরতি নেয়া এবং চাপমুক্ত থাকার জন্য নিজেকে কিছু সময় দেয়া প্রয়োজন। এটি মস্তিষ্কের ক্লান্তি কমায় এবং এর কার্যকারিতা বাড়ায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এসব সুস্থ জীবনযাত্রার অভ্যাস মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মনোবল বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের জীবনে এসব অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত করলে দীর্ঘ মেয়াদে মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ইউ