সংগৃহীত ছবি
আধুনিক জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন- এসবের জন্য যে অসুখগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলে তা হলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা। কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি যা শরীরের ক্ষতি করে। বেশি শুয়ে বসে থাকার কারণে কোলেস্টেরল বাড়ে। এরপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন- এসব কারণেও বাড়ে।
তবে উচ্চ কোলেস্টেরল শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। উচ্চ কোলেস্টেরল বন্ধ করে দিতে পারে আপনার হার্টের রক্তনালি। রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এতে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন।
কোলেস্টেরল এক ধরণের ফ্যাট যা রক্তে উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেরল দেহের অভ্যন্তরে অনেকগুলো কার্যক্রমে যেমন কোষকে নমনীয় রাখার জন্য এবং ভিটামিন ডি পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। রক্তে দুধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে, একটি হল এলডিএল এবং অন্যটি এইচডিএল।
রক্তের ধমনীতে বাধা দিয়ে এলডিএল কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। যেখানে এইচডিএল কোলেস্টেরল আপনার হৃদয়ের যত্ন নিতে কাজ করে। কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ কেবল খারাপ জীবনযাত্রা নয়, পারিবারিক ইতিহাসও এর জন্য দায়ী। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার, হালকা ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রসুন ভালো কাজ করে
রসুন অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি কোলেস্টেরল হ্রাস করার একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে এর জন্য আপনাকে সকালে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটি কাঁচা খেতে হবে। আসলে, এতে অ্যালিসনের উপস্থিত রয়েছে, যা মোট এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করতে সক্ষম।
হলুদ
কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকতে হবে ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে ও এলডিএল ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের মধ্যে। কো-মর্বিডিটি থাকলে এলডিএলের মাত্রা ৮০-র মধ্যে রাখতে হবে। মাত্রা ছাড়ালেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কিন্তু কোলেস্টেরলের ওষুধ নিজে থেকে বন্ধ করবেন না। হলুদ খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতেও কাজ করে। আসলে, হলুদের ভিতরে থাকা উপাদানগুলো রক্তের ধমনী থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ করতে কাজ করে। এর জন্য আপনি হলুদের দুধ পান করতে পারেন। অথবা আপনি সকালে গরম পানির সঙ্গে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া খেতে পারেন।
গ্রিন-টি
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ গ্রিন-টিতে থাকা ‘ক্যাটাচিন’ শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ১২ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত গ্রিন-টি খেলে শরীরে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়।
ধনে
দেহে এলডিএল নামক একধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, যা দেহের শিরা-উপশিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে সমস্যা বাড়ায়। এর কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধনে এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এইচডিএলর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে এই ধনে।
আমলকি
টক আর তেতো স্বাদে ভরা আমলকি গুণে-মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করতেও অসাধারণ গুণ রয়েছে। আমলার উপকারিতা কেবল চুলেই নয় হৃদয়কেও দেখা যায়। আসলে আমলার ভিতরে আমলা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়, যা কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। আপনি যদি চান কাঁচা খান, বা এক চামচ গুঁড়ো হালকা গরম জলের সঙ্গে পান করুন। এটি আপনার হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
সয়া মিল্ক
সয়া মিল্কে অল্প পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এই দুধের ক্রিম স্বাস্থ্যকর। এটি আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হার্টের জন্যও ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) প্রতিদিন ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অবশ্যই যেন সয়া মিল্কে বাড়তি চিনি, লবন বা চর্বি যোগ করা না থাকে। কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে লেখাটি পড়ে কিনবেন।
আপেল সিডার ভিনিগার
আপেল সিডার ভিনিগার কোলেস্টেরলসহ অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এর জন্য এক চামচ আপেল ভিনিগার নিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন। এটি আপনার কোলেস্টেরলের সমস্যাও সমাধান করবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
টমেটোর জুস
টমেটো লাইকোপেন-সমৃদ্ধ। এই উপাদানটি আপনার লিপিডের মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। টমেটোর রসে আছে কোলেস্টেরল কমানোর ফাইবার এবং নিয়াসিন।
বেরি স্মুদি
স্ট্রবেরি, ব্লু বেরি, ব্ল্যাক বেরির মতো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ফাইবার। কম ফ্যাট যুক্ত দুধের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার বেরি মিশিয়ে তৈরি করে নিন স্মুদি। সপ্তাহে তিন দিন এটি খেলে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কোকো পানীয়
কোকো ফ্ল্যাভানল নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। আরো রয়েছে উচ্চ মাত্রার মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডার্ক চকোলেটের প্রধান উপাদান কোকো। নিশ্চিত করতে হবে কোকো পানীয়তে অতিরিক্ত লবন, চিনি এবং যেন চর্বি না থাকে।
কমলালেবু
ভিটামিন সি-তে ভরপুর কমলালেবু। এ ভিটামিন শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কমলালেবুতে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার। এ প্রকার ফাইবার কোলেস্টেরল কমায়।
বাদাম
ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে বিভিন্ন প্রকার হৃদরোগ দূর করতে সাহায্য করে বাদাম।
//এল//