উইমেনআই২৪ প্রতিবেদক: ‘অপ্রকাশযোগ্য চুক্তির নথি চুরি’র অভিযোগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মামলা করলেও জব্দ তালিকায় এ ধরনের কোনো নথির কথা উল্লেখ ছিল না। বর্তমানে কারাগারে থাকা এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জামিন আবেদনের ওপর আদেশ আগামীকাল দেবেন আদালত।
রোজিনাকে সচিবালয়ে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের পর থেকে নানা বিষয় সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে— ‘নথি চুরি’ নাকি স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় এ সাংবাদিককে হেনস্তার শিকার ও গ্রেপ্তার হতে হলো? বর্তমানে বিষয়টিকে কীভাবে দেখা হচ্ছে? রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তা করার ভিডিও চিত্র ও সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো বাইরে এলো কীভাবে? সরকারি অফিসের কেউ এভাবে এগুলো ছড়িয়ে দিতে পারে কি না? এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
খুশী কবির বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যা ঘটছে, এতে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা হলো— সাংবাদিকরা যেন সাংবাদিকতা না করে। তারা শুধু কোন মন্ত্রী কোথায় কী উদ্বোধন করেছে, সরকার কী প্রেস রিলিজ দিয়েছে, আর কোথায় কৃষির ভালো ফসল হয়েছে— সেগুলো ছাপায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যেন না করে। এই বছর আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। যে নীতিগুলো নিয়ে এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল, তার মূলে ছিল গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের মূলে রয়েছে মানুষের জানার অধিকার। কীভাবে জানবে? সাংবাদিকরা আমাদেরকে তথ্য দেবে। চুরি, অনিয়ম, দুর্নীতি করবে, আর সেটা নিয়ে লিখলে শাস্তি পেতে হবে, এটা আমাদের কাম্য নয়। রোজিনা ইসলামকে অযথা হয়রানি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, জামিনযোগ্য ধারাতেও তাকে জামিন দিচ্ছে না। এগুলো হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। শুধু তাকেই নয়, এর মাধ্যমে গোটা সাংবাদিক সমাজকেই বলা যে, তোমরা এ ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করো না।’
‘এর আগেও অনেক সময় অনেক সাংবাদিকদের ধরে নেওয়া হয়েছে। যেটা সাধারণত র্যাব বা পুলিশ করেছে। আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যার যেটা মনে হয়েছে যে, এই ঘটনাটা ঘটেছে সচিবালয়ের ভেতরে। সেখানে কারা আছে? যারা পাবলিক সার্ভেন্ট। মানে যারা জনগণের সেবায় নিয়োজিত। তাদেরকে শপথও নিতে হয়েছে যে, তারা এ কাজটা করবে। সচিবালয়ের ভেতরে সরকারি কর্মকর্তারা পার্টি অফিসের ক্যাডারের মতো আচরণ করে পুরো সচিবালয়ের মুখটাকে কালিমা করেছে। মন্ত্রী আর সচিব যে বলছে, তিনি চুরি করতে গিয়েছেন, যদি তাদের গোপন নথি থাকে, তাহলে তারা দরজা খোলা রেখে টেবিলের ওপর সেটাকে ফেলে রাখবে? আমি বিশ্বাস করি না যে রোজিনা গোপন নথি নিয়েছেন। কিন্তু, যদি তাদের কথা অনুযায়ী নিয়েও থাকেন, তাদের কথা যদি সত্যও হয়, এখানে প্রশ্ন হলো— কেন এটাকে এমনভাবে রাখা হলো যে সবাই নিতে পারে? তারা কীভাবে তাদের জিনিসপত্র রাখে?’, বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যা করা হয়েছে, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন ও ২০১১ সালের পাবলিক ইন্টারেস্ট ইনফরমেশন ডিসক্লোজার আইন অনুযায়ী এটা করা যায় না। একটাতে সরকারের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া, পাওয়া ও প্রকাশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর জনস্বার্থে প্রকাশিত তথ্যের কারণে কোনো ব্যবস্থা যে নেওয়া যাবে না, সেটা পরের আইনে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এই ঘটনা আমাদের দেশের জন্যে খারাপ। দেশের বাইরেও আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ কাজ যারা করতে পারে, তারা পাবলিক সার্ভেন্ট তো না। তারা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার কিংবা গুণ্ডা। এই কাজের মাধ্যমে পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থাটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালতে যখন একটা মামলা চলছে, তখন এসব ভিডিও ছড়িয়ে কি আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে নাকি জনগণকে? এসব ভিডিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা কিংবা তারা যদি পুলিশকে দিয়ে থাকে, তাদের কাছেও থাকবে। এগুলো ছড়িয়ে দেওয়াটাও তো বেআইনি। এভাবে দেশের ভাবমূর্তি সাংঘাতিকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। কিছু হলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়ে যাচ্ছে। তো এসব ভিডিও যে ছড়ানো হচ্ছে, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে না কেন? গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেই দেখেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পেজ থেকে এসব ভিডিও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা দিয়ে এসব ভিডিও ছড়াচ্ছে। অথচ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
সবশেষে খুশী কবির বলেন, ‘একটা কথা আছে যে, “জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড”। একটা জামিনযোগ্য ধারার মামলাকে পেছানো হলো। মামলার পর প্রথমে আদালতে গেলে সাধারণত পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করে আর বিপরীত পক্ষ জামিন চায়। কিন্তু, প্রথমদিন জামিন আবেদন নেওয়া হলো না। পরে যেদিন জামিন আবেদনের শুনানি হলো, প্রথমে বলা হলো আদেশ বিকালে জানানো হবে। এরপর বলল রবিবার। এটা হচ্ছে তাকে শিক্ষা দেওয়া। আর সব সাংবাদিকদের মধ্যে একটা ভীতি সৃষ্টি করা। যাতে কেউ অনুসন্ধানী রিপোর্ট না করে। এর মাধ্যমে যে বার্তা যাচ্ছে, তা হলো— সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিসহ যা ইচ্ছা করতে পারে, গণতন্ত্র যাতে না ফেরে। এই কাজ তো গণতন্ত্রের জন্যে হুমকি। রোজিনা একজন অ্যাওয়ার্ডজয়ী সাংবাদিক, তিনি তো অপরিচিত কেউ না। অথচ তাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে আপনি কে, কীভাবে ঢুকেছেন। তাকে এতক্ষণ আটকে রেখে হেনস্তা করা হলো, সারারাত থানায় রাখা হলো। সরকারের বোঝা উচিত যে এই কাজের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।’
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘মহামান্য আদালতের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল যে, রোজিনার জামিনটা হয়ে যাবে। সেই প্রত্যাশাটা হোঁচট খেয়েছে। আইনজ্ঞ না হয়েও বুঝি যে জামিন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, আদালত দেরি করছেন। আশা করছি আগামীকালই তাকে জামিন দেওয়া হবে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হবে। একটা ঔপনিবেশিক কালো আইন, সেটা বাক-স্বাধীনতার ওপরে নিয়ে আসা হলো, এটাই আমাদের কাছে বিরাট প্রশ্ন।’
‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি করার জায়গাটাকে শক্তিশালী করে থাকে গণমাধ্যম। অবশ্যই গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমই সরকারের হাতকে শক্তিশালী করে। সেজন্যই এটাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে রোজিনা যে প্রতিবেদনগুলো করছিলেন, সেগুলোর কারণেই যে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে, এটা বুঝতে তো রকেট সাইন্স লাগে না। এটা দৃশ্যমান। এ দেশের অগণিত মানুষ এগুলো জানে, বোঝে। এ ঘটনায় মানুষ হতাশ হয়েছে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখছি যে, সর্বস্তরের মানুষের কাছে থেকেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। রোজিনাকে হেনস্তা করা, তার গ্রেপ্তার— এগুলো রাজনৈতিক মহলেও ভালোভাবে নেওয়া হয়নি। তাহলে এটা কারা করল? এটা কেন করল? সরকারকে বিব্রত করার জন্যে? নাকি গণমাধ্যমকে বার্তা দেওয়ার জন্যে? নাকি সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের অন্যায়-দুর্নীতি ঢাকতে? এই প্রশ্ন উঠেছে’, বলেন তিনি।
একজন নারী সাংবাদিককে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কোনো সরকারি কর্মকর্তার নেই বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘নারী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে বলছি, কোনো গণমাধ্যমকর্মী যদি ভুলও করে থাকেন, তাহলে তাকে কেন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সচিবালয়ে আটকে রাখা হলো? ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে তা ধরিয়ে দেওয়া বা যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেই সোপর্দ করা হবে, তাহলে তা যথাযথভাবে করা উচিত ছিল। কিন্তু, কোনোটাই মানা হয়নি। একজন নারী সাংবাদিককে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কোনো সরকারি কর্মকর্তার নেই। তিনি যত প্রভাবশালীই হোক না কেন। নানা অভিযোগ এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও উঠছে। ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বও বলেছেন যে, “সংবাদকর্মী নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক”। আমি মনে করি এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনেরও (দুদক) একটা ভূমিকা আছে। দুদকের ভূমিকা ছিল বলেই আমরা স্বাস্থ্যের একজন চালকের কোটিপতি হওয়ার ঘটনা জেনেছিলাম এবং সেটা গণমাধ্যমের পক্ষ থেকেই জেনেছিলাম। তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। একজন চালককে বিচারের আওতায় আনা হবে, আর উচ্চপদস্থদের আনা যাবে না, এটা তো আইনের শাসন হতে পারে না। এটা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
‘সবশেষে বলতে চাই, রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একইসঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে রোজিনাকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভিডিও ফুটেজ ছড়ানো হলো, কারা এ কাজ করল, সেটাও অবশ্যই জানতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে সেটাও বের হয়ে আসবে’, যোগ করেন রাশেদা কে চৌধুরী।
সচিবালয়ে রোজিনাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা কোনো ধরনের নৈতিকতার মধ্যেই পড়ে না বলে মনে করেন ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে, তিনি সেখানে গিয়ে “নথি চুরি করেছেন এবং নথিগুলো তিনি তার শরীরে লুকিয়ে রেখেছেন”। এই অভিযোগ তারা করেছে। আমরা বলছি, এই অভিযোগ তারা করতে পারেন। কিন্তু, তাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে যে হেনস্তা করা হলো, এটা তো কোনো ধরনের নৈতিকতার মধ্যেই পড়ে না। এটা তারা কেন করলেন? তাদের যখন মনে হলো যে রোজিনা অপরাধ করেছেন, তারা যে প্রক্রিয়ায় যেতে চাচ্ছিলেন, তখন রোজিনাকে চা খাইয়ে, কথা বলে বা অন্য কোনোভাবে সময়টা ক্ষেপণ করা যেত। কিন্তু, তা না করে যা করা হলো, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।’
সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে বলেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি সাংবাদিকরা যেকোনোভাবেই হোক তথ্য সংগ্রহ করেন। সেটা তারা করবেনই এবং সেটা করেন বলেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে। তারা অনেকটাই সোর্সের ওপর নির্ভর করে থাকেন। আমরা বলি যে, এটা আমাদের অধিকার, জনগণেরও তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে এবং সাংবাদিকরা জনগণের জন্যেই কাজ করেন। তারা বলছে, রোজিনা রাষ্ট্রের আইনে অপরাধ করেছেন। সেখানেও আমি যাচ্ছি না, যেহেতু তারা মামলা করেছেন, মামলা তার স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। এরপরেও আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে তদন্ত সুষ্ঠু হয় এবং রোজিনাকে আর কোনো ধরনের হেনস্তার শিকার না হতে হয়। তাকে যে হেনস্তা করা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। রোজিনা অপরাধী সেটা কেউই বলতে পারে না। হ্যাঁ, অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে। অপরাধ করেছে কী না, সেটা আদালতে সাব্যস্ত হবে। এর আগে কাউকেই অপরাধী বলা যায় না। মন্ত্রীদের আমরা একটা বিষয়ই বলেছি যে, রোজিনা যাতে সুবিচার পান, তার সঙ্গে আর যেন কোনো অন্যায় না হয়। যেহেতু মামলা চলছে, তাই এটা নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বলতে চাই, অনেকগুলো গ্রাউন্ডে তাকে জামিন দেওয়া যায়। সুতরাং তাকে যেন জামিন দেওয়া হয়। এটা যেকারোরই প্রাপ্য অধিকার।’
‘যদি তার জামিন হয়ে যায়, এরপরও মামলা চলতে পারে। প্রথমেই তাকে জামিন দেওয়ার দাবি জানাই। অনেক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি যে, এই মামলাটা টিকবে না। যে আইনটা ৫০ বছরেও কোনোদিন ব্যবহার হয়নি, সেই আইনে মামলাটা করা হয়েছে। ব্যবহার না করা হলেও আইন থাকলে যেকোনো সময়েই সেটাকে ব্যবহার করা যায়। এই মামলার মাধ্যমে এই আইনটাই বাতিল করা হোক বলে আমি প্রত্যাশা করছি। ২০১১ সালে তথ্য সুরক্ষা আইন করেছে সরকার। আমলারা যদি জনস্বার্থে কোনো তথ্য দেয়, সেই আইনের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু, সাংবাদিকরা জনস্বার্থে কোনো তথ্য নিলে তাদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। তাই আমার দাবি, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় এখন একটা আইন করতে হবে’, বলেন তিনি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মামলাটি আদালতে চলছে, তাই এসব ভিডিও কতটুকু গ্রহণযোগ্য, ঠিক বা বেঠিক, তা মামলার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের হয়ে আসবে। কিন্তু, কাউকে আটকে রেখে এ ধরনের ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন করা। সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। সেটা কেউ করতে পারেন না।’
সবশেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, ‘সচিবালয়ে যেটা তার সঙ্গে করা হলো, সেটা কোনোভাবেই কারো সঙ্গেই করা যেতে পারে না। যেহেতু তারা বলছেন রোজিনা অপরাধী, তারা আরও আগে মামলা দিতে পারতেন। সময় নিলে রোজিনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, তাকে আপ্যায়ন করে, তার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটানো যেত। তাকে যে হেনস্তা করা হয়েছে, সেটা আমরা মানতে পারি না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। তাকে কেন হেনস্তা করা হলো, সে বিচার করতে হবে। অভিযোগ থাকলে তা আদালতে বিচার হবে। কিন্তু, তারা কেন তার গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাল, বাজে ব্যবহার করল? এগুলো কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এর শাস্তি প্রয়োজন। রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা হলো, সেই মামলা চলছে। কিন্তু, যারা এটা করল, তাদেরকেও তো আইনের আওতায় আনতে হবে।’ দ্য ডেইলি স্টার