ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, পৌষ ৬ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

English

সাক্ষাৎকার

প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৫ মার্চ ২০২১

প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম

শিল্পী নাগ: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে মেডিকেল কোরে ( হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট ) প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম। তিনিই প্রথম নারী কর্মকর্তা যিনি ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর মেডিক্যাল সার্ভিসেসের প্রথম নারী তিনি। জাতিসংঘের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি দু-দুবার সাফল্য এবং সম্মানের সঙ্গে কন্টিনজেন্ট কমান্ড করেছেন এবং কান্ট্রি সিনিয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বগুড়া ২১ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্সে পুরুষ অফিসার সৈনিকদের মধ্যে নাজমা বেগম একমাত্র নারী অফিসার ছিলেন। তাঁবুতে থেকেছেন। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি এবং অন্ধকারের মধ্যেও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম নারী এ্যাম্বুলেন্স অধিনায়কের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাকে তাদের সুরক্ষা দিতে হবে। আমার বিশ্বাস ও সাহস দিয়ে আমি চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলাম।’

২০১৬ সালে আইভোরিকোস্টে জাতিসংঘের প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে জাতিসংঘের লেভেল-দুই হাসপাতালে কমান্ডের দায়িত্ব পালন করি। প্রথমবার ছয়জন নারী ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন নারী চিকিৎসক ছিলেন। ফোর্স কমান্ডার আমাকে বলেছিলেন, তোমাদের দেশের মেয়েরা তো এখনো পিছিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, প্রথম নারী কমান্ডার হিসেবে আমি সেই দেশ থেকেই এসেছি। আর আপনি বলছেন আমাদের দেশের মেয়েরা অধিকার বঞ্চিত। অথচ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামার পার্লামেন্টে কজন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর শতকরা হার .০৫ হবে না। এক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি আপনাদের চেয়ে। এরপর ফোর্স কমান্ডার আর কোনো কথা বলেননি।’

তিনি বলেন, ‘মেক্সিকোতে অনেক আগে থেকে নারী উন্নয়ন শুরু হলেও পেশাগত দিক থেকে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন মনে হয়নি। আমি একজন নারী কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ায় ওরা খুব সম্মান করতেন। নারী শিশুরা আমাদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসতেন। এর আগে ২০০৭ সালেও আইভোরিকোস্টে গিয়েছিলাম। সেসময়ে দেখেছি এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে প্রথমবারের মিশনের তুলনায় দ্বিতীয়বার মিশনে গিয়ে দেখেছি, এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশ কমেছে।’

‘২০১৮ সালে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে যাই। এই মিশনটা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। এখানে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সতেরটি সশস্ত্র দল ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা অস্ত্র ব্যবহার করতেন। মাঝে মাঝেই তারা নিজেদের মধ্যে কলহে জড়িয়ে পড়তেন। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে নারী-শিশুরা বেশি ভোগান্তির শিকার হতেন। স্বামীর কথা না শোনায় স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এক যুবককে জেলে দেখে আমার মনে হয়নি তিনি সন্ত্রাসী। পরে জানতে পেরেছি ও তার গার্লফেন্ডকে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহে গুলি করে হত্যা করেছে। নারীরা ধর্ষণের শিকারও বেশি হচ্ছে। যারা লিভ টুগেদার করছেন তারা সন্তানসহ মেয়েটিকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সিঙ্গেল মাকেই সন্তান প্রতিপালন করতে হতো। শিক্ষা, চাকরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার কারণে তারা পুষ্টিহীনতার শিকার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থে আমরা নারী-শিশুদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা, ওষুধ দিয়েছি। কারণ তারা এতটাই দরিদ্র যে চিকিৎসা করানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই।’

‘ইউএনএর একজন আফ্রিকান সাংবাদিক জোনাথন। তিনি তিন ভাষায় কথা বলতে পারতেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি ছয় বছর এক মেয়ের সঙ্গে লিভ টুগেদার করেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন। তার মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়। মেয়েটি চিৎকার করে কান্না করছিলেন। জাতিসংঘের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বললেন, মেয়েটি আইনগতভাবে তার স্ত্রী নয়। এত বছর সম্পর্ক থাকার পরও কাগজে-কলমে কোনো সম্পর্ক না থাকায় তিনি জোনাথনের সম্পত্তির কোনো ভাগই পাবেন না। মেয়েটিকে আগের স্বামীর সন্তানসহ রাস্তায় নেমে আসতে হলো। পরের দিন তিনি কি খাবেন সেই অর্থও তার কাছে ছিল না।’

এই মিশনে নাজমা বেগম একবার আল খাতিম গ্রুপের লোকদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। তার মিশনের লোকদের জীবন বাঁচাতে তিনি কমান্ডার হিসেবে অফিসে বসে না থেকে রিভলবার হাতে তুলে নেন । মিশনে কাজ করতে গিয়ে ফিলিপাইনের মিলিটারি অফিসার কর্ণেল তেরেসা, মেজর নীলান্তি, মিশরের মিলিটারি চিকিৎসক মেজর নেসরিন, মালডোবার অফিসার মেজর ইলিয়ানার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- জাতিসংঘের স্পেশাল রিপ্রেজেনটিভ সেক্রেটারী জেনারেল সম্মাননা, জাতিসংঘের ফোর্স কমান্ডার সম্মাননা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সেনাপ্রধান পুরস্কার, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সম্মাননা। প্রিফেক্ট, মেয়র, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্মাননাও পেয়েছেন।

কাজের ফাঁকে তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। শিশুতোষ, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, স্বাস্থ্যবিষয়ক, কিশোর গল্পকথা, ইত্যাদি। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার পদক, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক, জগজিৎ সিং পদক, সেনা পারদর্শিতা পদক ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে মেডিকেল কোরে ( হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট ) প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগমের জন্ম নীলফামারী জেলায়। নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নীলফামারি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি করে ১৯৯৬ সালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।  পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেন। ২০০৪ সালে নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে পিএইচডি করেন। স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর দিলদারুল ইসলামের অনুপ্রেরণায়  সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। বাবা নইমুল ইসলাম ও মা বেগম জুলেখা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। বাবা-মা-স্বামীর সহযোগিতায় তিনি এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছেন।

আন্তজার্তিক নারী দিবসে তিনি সকল নারীর উদ্দেশে বললেন, বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, দুই মেয়ের সহযোগিতায় আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছি। কর্মক্ষেত্র ও পরিবার একসঙ্গে সামলাতে নিজেকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে চলতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দিতে হবে। পরিবারের সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। সমালোচনায় কান দিলে একজন নারীর শক্তি ও মানসিক সাহস কমে যায়। ওসবকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে হবে। আর যে নারী সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে আগ্রহী তাকে নিয়মানুবর্তিতার প্রতি জোর দিতে হবে। সেনাবাহিনীতে নিয়মনীতি, কমান্ডারের কমান্ড মেনে চলতে হয়। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ যতই কঠিন হোক তা করতে হবে। ছোটবেলা থেকে মেয়েরা যদি খেলাধুলা, হাঁটা, শরীরচর্চা নিয়মিত করে নিজেকে ফিট রাখে তাহলে একজন পুরুষ সৈনিকের চেয়ে একজন নারী সৈনিক যথেষ্ট ভালো করতে পারেন।
 

বিপিএল ইতিহাসে প্রথমবার ট্রফি ভ্রমণ

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

ইসলামী ব্যাংকে সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

মাদ্রিদে প্রবাসী বাংলাদেশি মিজান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

কমিশনের খসড়া সুপারিশে অসন্তোষ: আন্দোলনের পথে ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তা

চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু চাঁদাবাজের পরিবর্তন হয়েছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

স্টল ভাড়া কমানোর দাবিতে বাংলা একাডেমিতে অনশনের ঘোষণা 

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের আহ্বান 

ইউসেপ বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারপারসন হলেন ড. ওবায়দুর 

রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ছাড়া পুলিশের সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না

চাঁদাবাজরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সতর্ক থাকুন: হাসনাত

বেলাবতে ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু, ছেলে গ্রেপ্তার

৬ মাসে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন দাবি জামায়াতের

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান: শহীদদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ

সোনাইমুড়ীতে হোসেনপুর ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদরাসার উদ্বোধন