
ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বড় উত্থানের পর বড় দরপতন, এরপর আবার বড় উত্থান। এর ফলে, বিশ্ববাজারে প্রথমবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, যা সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, পৃথকভাবে শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় বেশ কয়েকবার স্বর্ণের দাম বেড়েছে। মার্চের শেষ দিকে প্রথমবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে স্বর্ণের দাম বড় ধরনের পতন ঘটে।
এরপর চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের ওপর শুল্ক বাড়ায়। দুই দেশের এই শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে আবারও স্বর্ণের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহে, প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ২০০ ডলার স্পর্শ করে। তবে এরপর কিছুটা দাম কমে আসে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর শুল্ক আরও বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আবার দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩০৫ ডলার ৩৫ সেন্ট।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় সম্প্রতি দেশের বাজারেও কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ানো এবং কমানোর ঘটনা ঘটেছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণের একদিন পর, গত ১৪ এপ্রিল দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমানো হয়।
বাজুসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪ এপ্রিল থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০৫ টাকা, এবং ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৮৫১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ৭৩৪ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে দেশের বাজারে এই দামেই স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে, ১৩ এপ্রিল থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪২৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪১ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯২৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ায় দেশের বাজারে আবারও যে কোনো সময় এই ধাতুটির দাম বাড়তে পারে। কারণ, দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের পর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ১৫০ ডলার বেড়েছে। এখন নতুন করে দাম বাড়ানো হলে, অতীতের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।
বাজুসের এক সদস্য বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশের বাজারে সর্বশেষ দাম নির্ধারণের পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ১৫০ ডলারের বেশি বেড়েছে। প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই দাম বাড়ার প্রবণতা কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা মুশকিল। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে দেশের বাজারে দাম বাড়াতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
ইউ