ফাইল ছবি
৯০ বছর আগে গ্রেট ডিপ্রেশন নিয়ে এক জরিপ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট, যেখানে শুল্কারোপকে সেই সংকটের একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংকট কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কয়েক দশক সময় লেগে গিয়েছিল। ২০২৫ সালে শুল্ক এবং সুরক্ষাবাদের বিপদগুলি আরো স্পষ্ট হবে, এবং ট্রাম্প যদি তার নীতিতে অনড় থাকেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র আবারো একই ধরনের ভুল করতে পারে বলে সতর্ক করেছে দ্য ইকোনমিস্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার শুল্ক নীতির প্রতি কতটা কঠোর মনোভাব থাকবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ট্রাম্প সব ধরনের আমদানির ওপর শুল্কারোপ না করার মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন বিনিয়োগকারী এবং কূটনীতিকদের। তবুও, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি প্রটেকশনিজম বা সুরক্ষাবাদের চর্চা বাড়ানোর লক্ষ্যে। তার মতে, শুল্ক একটি সাধারণ এবং কার্যকরী হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, দেশকে আবারো উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু, এই ধারণাগুলি বাস্তবসম্মত নয়।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তবে সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি। শুল্ক আরোপের ফলে ডলারের মূল্য বেড়ে যায় এবং আমেরিকানদের বিদেশি পণ্য কেনার আগ্রহ কমে যায়, যা রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববাজারে পণ্য বিক্রি কমে যায়।
অতএব, যদি যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চায়, তবে দেশের মৌলিক অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এর মধ্যে সেভিংস হার বাড়ানো বা বিনিয়োগ কমানো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তবে এই দুটি পরিবর্তনই কাঙ্ক্ষিত নয়। বিশেষ করে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আধিপত্য ধরে রাখতে উচ্চ বিনিয়োগ অপরিহার্য।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ইতিহাস থেকে দেখা গেছে, এই ধরনের পদক্ষেপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। তার প্রথম শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছিল। যেসব কোম্পানিকে শুল্কের মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল, তাদের রাজস্ব কিছুটা বেড়েছিল, তবে বহু ডাউনস্ট্রিম কোম্পানি অতিরিক্ত ইনপুট খরচের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে আমদানি খরচ বাড়বে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্য আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে না। তাই, শুল্কের মাধ্যমে লাভের আশা করা অবাস্তব।
ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা ১৯ শতকের আমেরিকার অর্থনীতিকে একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচনা করেন, যখন শুল্ক উচ্চ ছিল এবং প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল। তবে, এটি একটি বিকৃত চিত্র, কারণ সেই সময়ে শুল্কের ফলে কম উৎপাদনশীল খাতগুলোর সুরক্ষা পেয়ে জীবনযাত্রার খরচ বাড়িয়ে দেয়।
ইউ