ছবি সংগৃহীত
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের মাটিতে গোপন কিলিং মিশন তথা গুপ্তহত্যা মিশন চালাচ্ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)।
‘ইন ইন্ডিয়া’স শ্যাডো ওয়ার উইদ পাকিস্তান, আ ক্যাম্পেইন অব কাভার্ট কিলিংস’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে শত্রুর মোকাবেলায় অন্য যেকোনো নেতার চেয়ে নিজেকে অগ্রনী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেই লক্ষ্যে তার নেতৃত্বাধীন ভারত পাকিস্তানের সাথে একটা ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা দেশটিতে গুপ্তহত্যা মিশন চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০২১ সালের পর পাকিস্তানে সংগঠিত ছয়টি গুপ্তহত্যার ঘটনা তদন্ত করেছে তারা। পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তা, সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার এবং পাকিস্তানি তদন্তকারীদের সংগ্রহ করা পুলিশি নথি ও অন্যান্য প্রমাণ পর্যালোচনা করেছে।
এসব তথ্য-উপাত্তে পাকিস্তানে ভারতের গুপ্তহত্যার মিশনের রূপরেখা সামনে এসেছে। এই গুপ্তহত্যার মিশনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর আমেরিকায় তথা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সংঘটিত গুপ্তহত্যার মিশনের বেশ মিল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আমির সরফরাজ তাম্বা নামে এক পাকিস্তানিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যে যে ছায়াযুদ্ধ চলছে তার সবশেষ ও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ আমির সরফরাজ হত্যাকাণ্ড।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ‘পাকিস্তানি ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, যদিও ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছে, তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানের গভীরে অন্তত অর্ধ ডজন লোককে হত্যা করার জন্য গুপ্তহত্যা মিশন শুরু করে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘র-এর কর্মকর্তাদের কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন-এমন অভিযোগের পর সম্প্রতি পশ্চিমা সরকারগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। উত্তর আমেরিকায় গুপ্তহত্যার যে অপারেশনগুলো চালানো হয়েছে, সেগুলো প্রথমে পাকিস্তানে পরীক্ষা করে ঝালিয়ে নেয়া হয়।’
প্রতিবেদন মতে, পাকিস্তানে সংগঠিত গুপ্তহত্যায় সাধারণত স্থানীয় ছোট অপরাধী বা আফগান ভাড়াটেদের ব্যবহার করা হয়। এই অভিযানে কখনও ভারতীয় নাগরিকদের ব্যবহার করা হয়নি। এই কাজে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করতে র কর্মকর্তারা দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের দালাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডগুলো যে চালানো হয়েছে সেগুলো প্রধানত জাতিসংঘে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত দুটি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদ-এর সন্দেহভাজন নেতাদের লক্ষ্য করে করা হয়। গোষ্ঠী দুটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সেনা ও নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করে আসছে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একইভাবে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে যে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেই হরদীপ সিং নিজ্জার ও গুরপাতওয়ান্ত পান্নুনকেও ভারত সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্ণিত করেছিল। যদিও পশ্চিমা কর্মকর্তারা এবং বিশ্লেষকরা তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় এই অবস্থানে আপত্তি জানিয়েছেন।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে পরিচালিত ভারতের অনেক কার্যক্রম আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। গোপনীয়তা বজায় রাখতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তারা কথা বলেছেন এবং এই বিষয়ে নানান তথ্য প্রদান করেছেন।
পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তদন্তের ওপর নির্ভরশীল না। ভারত কি শান্তিপূর্ণভাবে উঠে আসতে পারবে? আমাদের উত্তর হলো ‘না’। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইউ