ছবি: অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’ মাত্রা কম থাকলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। হিমোগ্লোবিন মূলত রক্তে অবস্থিত প্রোটিন। এটি রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে ও রক্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। এই হিমোগ্লোবিনের কারণেই রক্ত লাল হয়। হিমোগ্লোবিনের মূল কাজ হলো দেহের প্রতিটি অংশে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া। এ নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতেনতা প্রয়োজন।
রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’ সঠিক পরিমাণে না থাকলে শরীরে যেসব প্রভাব পড়ে তা নিয়ে উইমেনআই২৪ ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, বড় যেকোনো রোগের লক্ষণও কিন্তু এই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া থেকেই। এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্লান্তি আসে, আয়রনের ঘাটতি হওয়া মানেই অ্যানিমিয়া অবধারিত। তাই অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং চিকিৎসা শুরু করা। কারণ হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়াতে শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি এবং ফোলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলেই এই সমস্যা সবচাইতে বেশি দেখা যায়। সেই সঙ্গে কিডনী সমস্যা থেকেও হিমোগ্লোবিনের পরিমান কমে আসার ও একটি কারন। তিনি বলেন, হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক প্রকার প্রোটিন যার মধ্যে আয়রন এবং ট্রান্সপোর্টস অক্সিজেন বর্তমান।
আব্দুল্লাহ বলেন, দেহের সমস্ত কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়ার গুরুদায়িত্ব হিসেবে কাজ করে হিমোগ্লোবিন। শরীরে আয়রনের অভাব হলে তখনও হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। উন্নয়নশীল দেশেই অ্যানিমিয়ার প্রকোপ সবচাইতে বেশি। সেই সঙ্গে পরিসংখ্যান বলছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যা সব চেয়ে বেশি দেখা যায়! হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে কিডনির সমস্যা আসে। যেহেতু কিডনি শরীরের ছাঁকনির কাজ করে, তাই কিডনির মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের সর্বত্র পৌঁছয়। একারণেই শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে তা হেলাফেলা করা ঠিক না বলে জানালেন এই চিকিৎসক।
ডা. আব্দুল্লাহ সুষম খাবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এক্ষেত্রে ওষুধের থেকেও বেশি ভাল কাজ হয় যদি আপনি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে পারেন। রোজ নিয়ম করে শাক-সবজি খেতে পারেন। সেই সঙ্গে বেশি করে মৌসুমী ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি । সেই সঙ্গে প্রতি দিনের খাদ্য তালিকায় স্যালাদ, বাদাম এসব অবশ্যই রাখলে সবচেয়ে ভালো। সেইসঙ্গে যদি খাদ্য তালিকায় খাবারগুলো রাখেন তাহলে কোনোদিন রক্তাল্পতা আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।
তিনি জানান, বীট-শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে বিটের জুড়ি মেলা ভার। যাদের সুগার রয়েছে তারা বিট এড়িয়ে চলাই ভাল, যেহেতু বিটের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ শর্করা। বিটের থেকেও বেশি আয়রন রয়েছে বিটের পাতায়। তাই এই পাতা খেতে পারলেই কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাভ।
ডা. আব্দুল্লাহ জানান, জাম সাধারণত গরমের মৌসুমে পাওয়া যায়। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। এই ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যাভাসে । এমন কি জামের বীজও গুঁড়ো করে খেলে সুগার থাকে নিয়ন্ত্রণে। জাম খেলে রক্তও বাড়ে। সবচেয়ে ভাল যদি আমলা আর জামের জুস একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে বাড়বে শরীরে রক্তের পরিমাণ। পেস্তা-রোজ সকালে তিন থেকে চারটে পেস্তা খেতে পারলে খুবই ভাল। পেস্তা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। এই ফলের মধ্যে রয়েছে ৩০ রকম ভিটামিন। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও। লেবুর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও আয়রণ শোষণেও কাজে লাগে লেবু। তাই নিয়ম করে লেবু খান। শরীরে বাড়বে রক্ত। বেদানা ফলের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। একগ্লাস ইষদুষ্ণ দুধের সঙ্গে বেদানার রস মিশিয়ে খান। এতেও শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। সবথেকে ভাল রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে খেজুর ফেলে খান। এতেও ভাল কাজ হবে। দৃষ্টিশক্তিও ভাল হবে। আপেল-কথায় বলে রোজ একটা করে আপেল খেলে চিকিৎসা খাতে খরচ কমে যায়। আপেলে রয়েছে একাধিক গুণ। আর তাই রোজ একটা করে আপেল খেতে পারলে খুব ভাল। এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, মেয়েরা রোজ আপেল খেতে পারলে ভালো। আপেল দিয়ে প্যানকেক, আপেল পাইও বানিয়ে নিতে পারেন।
ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, রক্ত গঠনের জন্য ভূমিকা রয়েছে কিশমিশের। কিশমিশের মধ্যে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। বিশেষত কালো কিশমিশের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। তাই কিশমিশ খেতে বলেন, নিয়ম করে তিনি। এতে বেশি ভাল কাজ করে শরীরের জন্য। এছাড়াও গ্রাম-গঞ্জে ডুমুর পাওয়া যায়। আর ডুমুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ১, বি ২, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস,ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম,পটাশিয়ামএবং ক্লোরিন রয়েছে। রোজ রাতে দুটো ডুমুর জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে তা ছেঁকে খান। এতেও বাড়বে হিমোগ্লোবিন। খেতে পারেন ভাতের সঙ্গে ডুমুরের তরকারিও। ডুমুর ভাজিসহ মাছ দিয়েও রান্না খুবই সুস্বাদু হয় বলেও জানালেন এই মিডিসিন বিশেষজ্ঞ।
ইউ