সংগৃহীত ছবি
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, বলেন, দেশে প্রায় ৭০ ভাগ সন্তানের জন্ম বাড়িতে দাইমার হাতে । স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাসপাতালে সন্তানের জন্মের হার কম। সরকারি হাসপাতালে বেলা ১টার পর ডাক্তার না থাকার কারণেও ডেলিভারি সেবা পাওয়া যায় না।
কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্যি। তবে এটি শুধু সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা বা সদর, জেলা হাসপাতালেও এই দৃশ্য দেখা যায়।
আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় ঢাকা রির্পোটার্স ইউনিটিতে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আয়োজনে "গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দাইমাদের ভূমিকা" শীর্ষক আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মাতৃস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। দেশে মাতৃস্বাস্থ্যের যে কমকান্ডের দরকার ছিল এর ধারের কাছেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে যে পরিমাণ ডাক্তার থাকার প্রয়োজন ছিল সেই পরিমাণ নেই। বিভিন্ন কারণে তারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন। বিভিন্ন হাসপাতাল গুলো পরিদর্শন করে এই তথ্য উঠে এসেছে, মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে মান রক্ষা করা দরকার ছিল আমাদের হাসপাতাল গুলোতে সেই মান নেই। যেখানে ৫০ জন মায়ের বেড রয়েছে, সেখানে ১০০ মাকে রাখা হয়েছে। এক বেডে ৩ জন শিশুকে রাখা হয়েছে।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এমন কোনো মেকানিজম নেই, জাদুর বলে তা পরিবর্তন করে দিতে পারব। সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার আমার কাছে নেই। কারণ আমি চাইলেই ডাক্তার নিয়োগ দিতে পারবো না।
বিশেষ করে দাইমাদের হাতে যারা সন্তান প্রসব করছে। একসময় যারা বাঁশের কাঠি, পুরনো ব্লেড দিয়ে নবজাতকের নাড়ি কাটতেন। এই সমস্যা নিরসনে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম দাইমাদের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এখনও গ্রামে দাইমায়েরা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দাইমাদের প্রশিক্ষণের জন্য কি প্রয়োজন সরকারিভাবে তা দেখা যেতে পারে। মাতৃস্বাস্থ্য কাজে দাইমাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধের দিকে আমাদের বেশী মনোযোগী হতে হবে এবং তামাককে না বলতে হবে। দাইমাদের কথা নিবিরভাবে শোনার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে তিনি কয়েকটি সুপারিশের উপর গুরুত্ব দেন। যাতে পরবর্তী সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করে।
সভায় সভাপ্রধান ছিলেন সম্মানিত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা.সামিনা চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য দেন, নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. মাহাজেবীন চৌধুরী, বারডেমের পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো, লেখক রোকেয়া ইসলাম, জাগো নারী ফাউন্ডেশনের মুশতারী বেগম, প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা অনন্যা রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিডওয়াইভ তামান্না দিলরুবা, কুষ্টিয়া সদরের জিয়ারখী সালেহা বেগম, গোপারপুর, জিয়ারধীর সুফিয়া বেগম, নাটোরের দাসগ্রাম, চাঁন্দাই, বড়াইগ্রাম, সুরাইয়া খাতুন, পাবনার ঈশ্বরদীর সুলতানপুর, দাশুরিয়ার
মমতাজ বেগম, টাঙ্গাইল দেলদুয়ারের রেহেনা বেগম, হাজেরা বেগম, খাদিজা বেগম এবং সংগঠকের বক্তব্য দেন কুষ্টিয়ার ডলি ভদ্র, টাংগাইলের সংগঠক ফাহিমা খাতুন লিজা ও পাবনার ঈশ্বরদী সংগঠক আজমিরা খাতুন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নারী প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সীমু।
বক্তারা বলেন, গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এখনও সবার আগে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তিনি হলেন গ্রামের দাই মা। ধাত্রী বা দাইকেই বলা হয় দাইমা। গ্রামে এমন কোন নারীকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে যিনি মা হয়েছেন অথচ দাইমা'র সহযোগিতা পান নি। প্রসূতি মায়ের নিদানকালে ত্রানকর্ত্রী হিসাবে কাজ করেন দাইমা। মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ তারা নিঃস্বার্থভাবে উজাড় করে দেন। এমনকি সন্তান ধারণ থেকে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত প্রসূতি মায়ের খোঁজ রাখেন তারা। প্রয়োজনে নানা পরামর্শ দেন।
দাইমা'রা তাদের কাজের বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক দাবি করেন না। বরং সেবার আর্দশ নিয়ে তারা মানুষের উপকার করে থাকেন। কর্তব্যের তাগিদেই এ কাজ করেন। অধিকাংশ সময় প্রসূতি মায়ের পরিবার থেকে খুশি হয়ে যেটুকু উপহার দেওয়া হয় তাই খুশি মনে গ্রহণ করেন। গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সমাজে দাইমারা অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
সভায় বাংলাদেশের চারটি জেলা টাংগাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া ও নাটোর থেকে দাইমায়েরা গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যে কাজ করেন, তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন, কুষ্টিয়া থেকে দাইমা মমতা বেগম, সুফিয়া বেগম ও সালেহা বেগম। ঈশ্বরদী, পাবনা থেকে চায়না বেগম ও মমতাজ বেগম,। দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল থেকে খাদিজা বেগম, রেহেনা বেগম ও হাজেরা বেগম। নাটোর থেকে সুরাইয়া খাতুন।
দাইমায়েরা কি ভাবে গর্ভবতী নারী ও প্রসুতি মায়েদের সেবা দেন, গর্ভবতী নারীদের কি ধরণের জটিলতা দেখেন, সরকারী হাসপাতালে যাওয়া এবং গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির জন্য কি পরামর্শ দেন এ বিষয়গুলো দাইমায়েরা সরাসরি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, নূরজাহান বেগম এর কাছে তুলে ধরেন।
সভাপ্রধান প্রফেসর ডা. সামিনা চৌধুরী বক্তব্যে বলেন, দাইমায়েরা গ্রামে নারীদের পাশে থাকে তাই প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দাইমাদের কাজের প্রচার করতে হবে। তিনি প্রসবকালীন ৫টি ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সামিয়া আফরীন, শত শত বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে দাইমা সন্তান প্রসব করাচ্ছে। কোনো নারীর সন্তান গর্ভে এলে দাইমা তাদের পরামর্শ দেন।
বিশ বছর আগে নানীর কাছ থেকে দাইমার কাজ শিখেছেন জানালেন সালেহা বেগম।
//এল//