ফাইল ছবি
বিশিষ্ট নাট্যজন নির্দেশক অভিনেতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী জামাল উদ্দিন হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
কানাডার স্থানীয় সময় ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) সন্ধ্যা ছয়টায় কানাডার রকিভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই সন্তান ও তার স্ত্রী রওশন আরা হোসেনকে রেখে গেছেন।
তার ছেলে তাশফিন হোসেন তার বাবার মৃত্যুর সংবাদটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাবা জামাল উদ্দিন হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা থেকে কানাডার ক্যালগিরিতে তাঁর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে ভর্তি করান তিনি। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানান, তার বাবার ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। পরে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এর পরই চিকিৎসকরা তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এতদিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ সকালে কানাডার স্থানীয় সময় ১১ অক্টোবর লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলে তাঁর হার্টবিট আনস্টাবল হয়ে পড়ে। পরে ক্যালগেরি'র রকিভিউ হাসপাতালে আজ সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাশফিন আরো জানান, মূত্যকালে তার বাবার বয়স ছিল ৮১ বছর। এর আগে তাঁর বাবার দুবার স্ট্রোক হয়েছিল। এ ছাড়া কোভিডের সময় তার প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়েছিল। উল্লেখ্য গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রর আটলান্টা থেকে তিনি কানাডার ক্যালগিরিতে তাঁর বাড়িতে তিনি বেড়াতে এসেছিলেন।
উল্লেখ্য, টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের একসময়ের ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী জামাল উদ্দিন হোসেন সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। গেল ১৫ বছর ধরে অভিনয়ে একেবারে অনিয়মিত তিনি। এই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। মাঝেমধ্যে যখন দেশে ফিরতেন, টুকটাক অভিনয় করতেন। সাত–আট বছর ধরে একেবারে অভিনয়ে নেই। থাকেন না বাংলাদেশেও, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে আছেন। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের অধ্যাপক। মেয়ে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি তাঁর নিজের নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল শুরু করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি আলোচিত মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেছেন। জামালউদ্দিন হোসেনের অভিনয়শিল্পী স্ত্রী রওশন আরা হোসেনেরও শারীরিক অবস্থাও ভালো না।
জামালউদ্দনি হোসেনের জন্ম: ৮ অক্টোবর ১৯৪৩। তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও নাট্য কর্মী। শিল্পকলায় তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করেন।
জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ সালে অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা উভয়ই নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের শিল্পী ছিলেন, সেখানেই তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে কানাডার বাংলাদেশ কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।
তাঁর ছেলে তাসফিন হোসেন গণমাধ্যম কে জানান আগামীকাল ক্যালগেরির স্থানীয় সময় বাদ জোহর আকরাম জুম্মা মসজিদে নামাজে জানাজার পর তাঁকে কক্রেন কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ইউ