সংগৃহীত ছবি
শ্যামল সবুজ শয্য সফলা চা পাতার সঙ্গে নারীর সম্পর্ক আজকের নয়, বহুকালের। দুটি পাতা একটি কুঁড়ি উঠে আসে নারীদের হাত স্পর্শ করে। নারীর ঘামে-শ্রমেই আজ চা শিল্প বাণিজ্যিক ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। যে নারী চা শিল্পকে অধিষ্ঠিত করেছেন মর্যাদার আসনে, আজও তারা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশে মোট চা-বাগানের সংখ্যা ২৪০টি (ফাঁড়ি বাগানসহ)। এর মধ্যে মূল বাগান রয়েছে ১৫৮টি। সারাদেশে কর্মরত চা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। চা শ্রমিকদের সিংহভাগ নারী।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রের বরাতে জানা যায়, নারী-পুরুষের মজুরি এখন দৈনিক ১৭০ টাকা হলেও তিন ক্যাটাগরির বাগান রয়েছে। ফলে অনেক বাগানে নারী শ্রমিককে এখনও ন্যূনতম মজুরি ১২০ টাকাও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক এবং বাগানের স্থায়ী শ্রমিকের মজুরি এক হওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না।
নারী চা শ্রমিকদের মুখেই শোনা যাক কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার কথা। কমলগঞ্জের আলীনগর চা-বাগানের অঞ্জনা কৈরী জানান, কর্মক্ষেত্রে নারীর বড় সমস্যা হলো তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিভিন্ন বাঁধার মুখে পড়তে হয়। চা-বাগানের প্রতিটি সেকশনে (পৃথক পৃথক আবাদ) বৃষ্টির সময় ছাউনি থাকে না। ফলে বৃষ্টি গায়ে মেখেই কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডাজনিত নানান রোগ-শোকে ভুগতে হয় তাদের।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট চা-বাগানের চা শ্রমিক সুমা নায়েক, দীপা তাঁতি ও নীলু তাঁতি জানান, চার পুরুষ ধরে চা-বাগানে বাস করছেন, তারপরও তাদের বাসস্থানের মালিকানার অধিকার নেই। এ কারণে বিভিন্ন এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে চা-বাগানের বাইরের নারীদের মতো তারা হাঁস, মুরগি লালন-পালন কিংবা অন্য কোনো ছোট ব্যবসা করে অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের শুধু চা-বাগানের কাজ থেকে উপার্জিত টাকায় সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এতে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে না। এমনকি ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো লেখাপড়াও করাতে পারছেন না।
উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের ব্রহ্মাছড়া চা বাগানের তৃষ্ণা গোয়ালা, প্রতিমা নায়েক, অর্চনা গোয়ালাসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, অতীতে টিলাবাবুরা (চা-বাগানের কর্মকর্তা) উত্তোলিত চা পাতা পরিমাপের সময় ইচ্ছামতো ওজনে কম বুঝে নিত। কোনো নারী শ্রমিক এর প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। ট্রেড ইউনিয়নের পাশাপাশি চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ১৯৯৭ সালে মাদার্স ক্লাব নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। নারীদের অধিকার নিয়ে এ সংগঠন কাজ করত।
বাগানে এ সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ সংগঠনের কার্যক্রমের ফলে তারা প্রতিবাদ করতে শেখে। তাদের প্রতিবাদের মুখে টিলাবাবুরা সঠিক ওজন দিতে বাধ্য হতেন। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে চা-বাগানে মাদার্স ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়ছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, বিশেষ করে নারীদের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে অসুবিধায় মধ্যে পড়তে হয় সেটি হলো, চা-বাগানের সেকশনগুলোতে নারী চা শ্রমিকদের জন্য শৌচাগার এবং প্রক্ষালন কক্ষ নেই। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টিপাত দিয়ে সরকার ও বাগান কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানানো ছাড়া চা শ্রমিকদের স্থান নেই।
//এল//