সংগৃহীত ছবি
হাওর-অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো বছরের পুরোটা সময় সরব থাকে পর্যটকদের পদচারণায়। তবে, চলতি বছর তিন দফা বন্যা এবং দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে হওয়া পর্যটন এলাকাগুলোর চিত্র বদলে গেছে। পর্যটক না আসায় হতাশ টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকরা। হাউজবোটগুলোর মালিকরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে আমরা কয়েক হাজার পর্যটককে সেবা দিয়ে থাকি। তাদের নিয়ে আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরে যাই। বর্তমানে পর্যটক আসতে না পারায় বোটের ভেতর কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার।
জানা গেছে, কোরবানি ঈদের সময় সারকারি ছুটির পাঁচ দিন ভালো ব্যবসার আশায় ছিলেন টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকরা। ঈদের আগের দিন ১৬ জুন থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে আসতে শুরু করে পাহাড়ি ঢল। দেখা দেয় বন্যা। ১৮ জুন নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওরসহ তাহিরপুর উপজেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এরপর গত ২৩ জুন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অল্পকিছুদিনের ব্যবধানে আবারো বন্যা দেখা দেয় সুনামগঞ্জ জেলায়। সর্বশেষ ১২ জুলাই তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি কম হওয়ায় ১৪ জুলাই থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করে। এরপর নতুন করে স্বপ্ন বুনছিলেন হাওর এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসীয়রা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতার ফলে আবারও থমকে যায় জেলার পর্যটনখাত। বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো টাঙ্গুয়ার হাওরে চলাচল করে। পৌর শহরের সাহেববাড়ি ঘাট, লঞ্চঘাট, মল্লিকপুর ঘাট, তাহিরপুর উপজেলা সদর (তাহিরপুর বাজার) থেকে হাউজবোটগুলো পর্যটক নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করে। এছাড়া, পর্যটকরা যান সীমান্তবর্তী নিলাদ্রী লেকসহ সব দর্শনীয় স্থানে। এতে বোট মালিক ও শ্রমিকরা অনেক টাকা আয় করেন। এবার পর্যটক আগমন না থাকায় বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত বোট মালিকরা।
টাঙ্গুরার হাওরের পর্যটকবাহী হাউসবোট হৈমন্তী-দ্য লাক্সারি ওয়াটার ভিলার মালিক আরিয়ান ইমন বলেন, গত ১৯ জুলাই থেকে আমাদের এখানে (টাঙ্গুয়ার হাওর) কোনো পর্যটক আসছেন না। আমরা আশা করেছিলাম, বন্যার পর ভালো ব্যবসা করতে পারবো। দেশের পরিস্থিতিতে সেটি আর হলো না। তিনি আরও বলেন, এই মৌসুমে সুনামগঞ্জে প্রায় ২০০’র মতো লাক্সারি হাউসবোট রয়েছে। এছাড়া নরমাল অনেক বোট আছে। প্রতিদিন আমরা কয়েক হাজার পর্যটককে সেবা দিয়ে থাকি। বর্তমানে পর্যটক শূন্য অবস্থায় আমরা দিন পার করছি। আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের হোটেল রয়েল ইন-এর রিসিপশন ম্যানাজার আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অবস্থার কারণে আমাদের হোটেলে একবারেই অতিথি নেই। প্রথম কয়েকদিন বন্যার কারণে বহু বুকিং মিস করেছি। পরে আমরা কিছু বুকিং পেয়েছি। পরিস্থিতির কারণে অনেকে বুকিং ক্যান্সেল করেছেন। আমাদের হোটেলে আগে যেখানে ২৫টি রুম বুকিং থাকতো এখন মাত্র ৩-৫টি রুম বুকিং হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা ডাউনের দিকে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটনবাহী একটি বোটের পরিচালক রোকন উদ্দিন বলেন, বন্যার কারণে আমাদের কয়েকটি ট্রিপ মিস হয়েছে। তখন আমাদের অনেক টাকা লস হয়। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আবারও কিছু ট্রিপের বুকিং নিয়েছিলাম। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে আবারও অনেক ট্রিপ বাদ দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রায় ৬টি ট্রিপ ক্যান্সেল হয়েছে। প্রায় ৬ লাখ টাকার লস হয়েছে। আমরা বছরে ৩ মাস পর্যটক নিয়ে হাওরে ঘুরতে পারি। ৩ মাসে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রিপ নিতে পারি। আমাদের হাওরে প্রায় ২০০-২৫০টি বোট আছে। সব মিলিয়ে অনেক টাকার লস হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।